মহানবী (সাঃ) এর জীবনী
হোনায়েনের যুদ্ধ
হোনায়েনের যুদ্ধ
★★★ আকস্মিক অভিযানে মক্কা বিজয় সংঘটিত হয়েছিলো। এতে আরবের জনগণ বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গিয়েছিলো। প্রতিবেশী গোত্রসমূহের মধ্যে এ অপ্রতাশিত অভিযানের মোকবেলা করার শক্তি ছিলো না। এ কারণে শক্তিশালী অহংকারী উচ্ছৃঙ্খল কিছু গোত্রসমূহ এবং বনু বেলালের কিছু লোক শামিল হয়েছিলো। এসব গোত্রের সম্পর্ক ছিলো কাইসে আইলানের সাথে।
মুসলমানদের কাছে আত্মসমর্পণ করা তারা আত্মমর্যাদার পরিপন্থী মনে করছিলো। তাই তারা মালেক ইবনে আওফ নসরীর কাছে গিয়ে মুসলমানদের ওপর হামলার সিদ্ধান্ত নিলো।
সিদ্ধান্তের পর মুসলমানদের সাথে যুদ্ধ করতে মালেক ইবনে আওফের নেতৃত্বে সকল সমবেত সকল অমুসলিম রওয়ানা হলো। তারা তাদের পরিবার-পরিজন এবং পশুপাল নিজেদের সঙ্গে নিয়ে চললো। আওতাস প্রান্তরে তারা উপস্থিত হলো। আওতাস হচ্ছে হোনায়েনের কাছে বনু হাওয়ানে এলাকার একটি প্রান্তর। কিন্তু এ প্রান্তর হোনায়েন থেকে পৃথক। হোনয়েন একটি পৃথক প্রান্তর। এটি যুল মাজাজ-এর সন্নিকটে অবস্থিত। সেখান থেকে আরাফাত হয়ে মক্কার দূরত্ব দশ মাইলের বেশী। [1]
মক্কা থেকে হোনায়েনের পথ যাত্রা:
অষ্টম হিজরীর ৬ই শাওয়াল রোববরা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কা থেকে হোনায়েনের উদ্দেশ্যে রওয়ান হলেন। এটা ছিলো তাঁর মক্কায় আগমনের উনিশতম দিন। তাঁর সঙ্গে ছিল ১২ হাজার সৈন্য। এদের মধ্যে ১০ হাজার মদীন থেকে মক্কায় এসেছিলেন, বাকি ২ হাজার মক্কা থেকে রওয়ান হন। মক্কার ২ হাজারের মধ্যে অধিকাংশই ছিলেন নও মুসলিম।
রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সফওয়ান ইবনে উমাইয়ার কাছ থেকে অস্ত্রসহ একশত বর্ম ধার নিলেন। আত্তাব ইবনে আছিদকে মক্কার গভর্ণর নিযুক্ত করলেন।
দুপুরের পরে একজন সাহাবী এসে বললেন, আমি অমুক পাহাড়ে উঠে দেখেছি বনু হাওয়াযেন সপরিবারে যুদ্ধ করতে এসেছে। তারা নিজেদের পশুপালও সঙ্গে এনেছে। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হেসে বললেন, ইনশা আল্লাহ আগামীকাল এগুলো মুসলমানদের গনীমতের মাল হবে।
রাতের বেলা হযরত আনাস ইবনে মারছাদ প্রহরীর দায়িত্ব পালন করলেন। কিছু লোক সৈন্য সংখ্যার আধিক্য দেখে বললেন, আমরা আজ কিছুতেই পরাজিত হব না। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একথাটিও পছন্দ করলেন না।
মুসলমানদের আকস্মিক হামলা:
১০ই শাওয়াল মঙ্গলবার দিবাগত রাতে ইসলামী বাহিনী হোনয়েনে পৌঁছুলো। মালেক ইবনে আওফ আগেই এ জায়গায় পৌঁছে রাতের অন্ধকারে তার সৈন্যদের বিভিন্ন স্থানে গোপনভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রেখেছিলো। তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছিলো যে, মুসলমানরা আসা মাত্র তাদের ওপর তীর নিক্ষেপ করবে এবং কিছুক্ষণ পর একজোটে হামলা করবে।
এদিকে খুব প্রত্যুষে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সৈন্যদের বিভিন্ন স্থানে মোতায়েন করলেন। খুব ভোরে মুসলিম সৈন্যরা হোনায়েনের প্রান্তরে পদার্পন করলেন। শত্রুসৈন্য সম্পর্কে তারা কিছুই জানতেন না। শত্রুরা যে ওঁৎ পেতে রয়েছে এ সম্পর্কে অনবহিত মুসলমান সৈন্যরা নিশ্চিন্তে অবস্থান নেয়ার সময় হঠাৎ করে তাদের ওপর তীরবৃষ্টি শুরু হলো।
কিছুক্ষণ পরই শত্রুরা একযোগে মুসলমানদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লো। মুসলমানরা ভ্যাবাচেকা খেয়ে ছত্রভঙ্গ হতে শুরু করলেন। এটা ছিলো সুস্পষ্ট পরাজয়। নও মুসলিম আবু সুফিয়ান বললেন, ওরা সমুদ্রপারে না গিয়ে থামবে না। [2]
সাহবারা ছত্রভঙ্গ হতে শুরু করলে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ডানদিকে আহ্বান জানিয়ে বলেন, হে লোক সকল, তোমরা আমার দিকে এসো, আমি আবদুল্লাহর পুত্র মোহাম্মদ। সেই সময় রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে কয়েকজন মোহজেরে এবং তাঁর বংশের সাহাবারা ছাড়া অন্য কেউ ছিলো না।
সেই নাযুক সময়ে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নযিরবিহীন বীরত্ব ও সাহসিকাতার পরিচয় দিলেন। তিনি শত্রুদের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন এবং উচ্চস্বরে বলছিলেন, আনান্নবিউল লা কাযেব আনা ইবনু আবদুল মোত্তালেব অর্থাৎ আমি নবী, আমি মিথ্যাবাদী নই, আমি আবদুল মোত্তালেবের পুত্র।
সেই সময় আবু সুফিয়ান এবং হযরত আব্বাস রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের খচ্চর ধরে রেখেছিলেন যাতে করে খচ্চর সামনের দিকে ছুটে যেতে না পারে। এরপর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর চাচা হযরত আব্বাসকে বললেন, লোকদের যেন তিনি উচ্চস্বরে ডাকতে শুর করেন। হযরত আব্বাসের ছিলো দরাজ গলা।
হযরত আব্বাস বলেন, আমি উচ্চ কন্ঠে ডাকলাম, কোথায় তোমরা বৃক্ষওয়ালা, বাইয়াতে রেদওয়ানওয়ালা। সাহাবার আমার কন্ঠ শুনে এমনভাবে ছুটে আসতে শুরু করলেন যেমন গাভীর আওয়ায শুনে বাছুর ছুটে আসে। সাহাবারা বললেন, আমরা আসছি। [3]
সাহাবারা ছুটে আসতে শুরু করলে। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চারিদিকে একশত সাহাবী সমবেত হলে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শত্রুর মোকাবেলা করলেন। যুদ্ধ শুরু হলো।
এরপর আনসারদের ডাকা হলো। ক্রমে বনু হারেস ইবনে খাযরাজের মধ্যে এই ডাক সীমিত হয়ে পড়লো। এদিকে সাহাবারা রণাঙ্গণ থেকে যেভাবে দ্রুত চলে গিয়েছিলেন, তেমনি দ্রুত ফিরে আসতে লাগলেন। দেখতে দেখতে প্রচন্ড যুদ্ধ শুরু হলো। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রণাঙ্গনের দিকে তাকিয়ে বললেন, এবার চুলো গরম হয়েছে। এরপর একমুঠো ধুলো তুলো ‘শাহাতুল উজুহ’ বলে শত্রুদের উদ্দেশ্যে নিক্ষেপ করলেন। এর অর্থ হচ্ছে চেহারা বিগড়ে যাক। নিক্ষিপ্ত ধুলোর ফলে প্রত্যেক শত্রুর চোখ ধুলি ধুসরিত হলো। তারা পৃষ্ট প্রদর্শন করে প্রাণ নিয়ে পালাতে শুরু করলো।
শত্রুদের পরাজয়:
রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ধুলো নিক্ষেপের পরই যুদ্ধের চেহারা পাল্টে গেলো শত্রুরা পরাজিত হলো। ছাকিফা গোত্রের ৭০ জন কাফের নিহত হলো। তাদের নিয়ে আসা অস্ত্র ধন-সম্পদ, রসদ, সামগ্রী, নারী, শিশু, পশুপাল সবকিছু মুসলমানদের হস্তগত হলো। আল্লাহ রব্বুল আলামীন এ সম্পর্কে বলেন,
‘আল্লাহ তায়ালা তোমাদেরকে সাহায্য করেছেন বহু ক্ষেত্রে এবং বিশেষ করে হোনায়নের যুদ্ধের দিনে, যখন তোমাদেরকে উৎফুল্ল করেছিলো তোমাদের সংখ্যাধিক্যে এবং তা তোমাদের কোন কাজে আসেনি এবং বিস্তৃত হওয়া সত্তেও পৃথিবী তোমদের জন্যে সঙ্কুচিত হয়েছিলো এবং পরে তোমরা পৃষ্ট প্রদর্শন করে পলায়ন করেছিলে, অতপর আল্লাহ তায়ালা তাঁর কাছ থেকে তাঁর রসূল এবং মোমেনদের ওপর প্রশান্তি বর্ষণ করেন এবং এমন এক সৈন্য বাহিনী প্রেরণ করেন যা তোমরা দেখতে পাওনি এবং তিনি কাফেরদের শাস্তি প্রদান করেন। এটা কাফেরদের কর্মফল।‘(সূরা তাওবা, আয়াত ২৫-২৬)
পরাজিত শত্রুদের সবচেয়ে বড় দল তায়েফের দিকে অগ্রসর হলো। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম গনীমতের মাল জমা করার পর তায়েফের পথে রওয়ানা হলেন।
গনীমতের মালের বিবরণ নিম্মরূপ। যুদ্ধবন্দী ৬ হাজার, উট ২৪ হাজার। বকরি ৪০ হাজারের বেশী। চাঁদি ৪ হাজার উকিয়া। অর্থাৎ ১ লাখ ৬০ হাজার দিরহাম। এর ওজন ৬ কুইন্টালের চেয়ে কয়েক কিলো কম।
রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সমুদয় মালামাল জমা করার নির্দেশে দিলেন। যেরানা নামক জায়গায় সমুদয় সম্পদ একত্রিত করে হযরত মাসউ ইবনে আমর গেফারী (রা.)-এর নিয়ন্ত্রণে রাখলেন। তায়েফ যুদ্ধ থেকে অবসর না পাওয়া পর্যন্ত এগুলো বন্ট করা হয়নি।
তায়েফের যুদ্ধ:
প্রথমে খালিদ ইবনে ওলীদের নেতৃত্বে এক হাজার সৈন্য পাঠানো হয়, এরপর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে রওয়ান হন। পথে নাখলা, ইমানিয়া এবং মনযিল অতিক্রম করেন। লিয়াহ নামক জায়গায় মালেক ইবনে আওফের একটি দুর্গ ছিলো। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নির্দেশে সেই দুর্গ ধ্বংস করে দেয়া হয়। এরপর সফর অব্যাহত রেখে তয়েফ পৌঁছার পর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তায়েফ দুর্গ অবরোধ করেন।
অবরোধ দীর্ঘস্থায়ী হয়। সহীহ মুসলিম শরীফে হযরত আনাসের (রা.) বর্ণনা অনুযায়ী এই অবরোধ ৪০ দিন স্থায়ী হয়। কোন কোন সীরাত রচয়িতা ২০ দিন বলেও উল্লেখ করেছেন। কেউ ১০, কেউ ১৫ আবার কেউ ১৮ দিন উল্লেখ করেছেন। [4]
অবরোধকালে উভয় পক্ষের মধ্যে তীর ও পাথর নিক্ষেপ করা হয়। মুসলমানদের প্রথম অবরোধকালে তাদের ওপর লাগাতার তীর নিক্ষেপ করা হয়। প্রথম অবস্থায় মুসলমানরা অবরোধ শুরু করলে দূর্গের ভেতর থেকে তাদের ওপর এতো বেশী তীর নিক্ষেপ করা হয়েছিলো যে মনে হয়েছিলো পঙ্গপাল ছায়া বিস্তার করেছে। এতে কয়েকজন মুসলমান আহত এবং ১২ জন শহীদ হন। ফলে মুসলমানরা তাঁবু সরিয়ে কিছুটা দূরে নিয়ে যান।
এর পরিস্থিতি মোকাবেলায় রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ যন্ত্র স্থাপন করেন এবং দূর্গ লক্ষ্যে করে কয়েকটি গোলা নিক্ষেপ করেন। এতে দেয়ালে ফাটল ধরে ছিদ্র হয়ে যায়। সাহাবারা সেই ছিদ্র দিয়ে তাদের প্র্রতি পাথর নিক্ষেপ করেন। কিন্তু শত্রুদের পক্ষ থেকে বৃষ্টির মতো তীর নিক্ষেপ করা হয়, এতে কয়েকজন মুসলমান শহীদ হন।
রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শত্রুদের কাবু করতে কৌশল হিসাবে আঙ্গুর গাছ কেটে পুড়িয়ে ফেলার নির্দেশ দিলেন। এতে বিচলিত ছকিফ গোত্র আল্লাহ তায়ালা এবং আত্মীয়তার সম্পর্কের দোহাই দিয়ে এ কাজ থেকে বিরত থাকার আবেদন জানালো। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তা মঞ্জুর করলেন।
অবরোধ দীর্ঘস্থায়ী হয়ে পড়লো এবং শত্রদের আত্মসমর্পণের কোন লক্ষণ দেখা গেলো না। তারা বছরের খাদ্য দুর্গের ভেতরে মজুদ করে রেখেছিলো। এ সময় রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নওফেল বিনে মাবিয়া দয়লির সাথে পরামর্শ করেন। নওফেল বলেন, শৃগাল তার গর্তে গিয়ে ঢুকেছে। যদি আপনি অবরোধ দীর্ঘায়িত করেন, তবে তাদের পাকড়াও করতে পারবেন।
আর যদি ফিরে যান, তবে তারা আপনার কোন ক্ষতি করতে পারবে না। একথা শুনে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অবরোধ অবসানের সিদ্ধান্ত নিলেন। হযরত ওমর (রা.) সাহাবাদের মধ্যে ঘোষণা প্রচার করলেন যে, ইনশা আল্লাহ আগামীকাল আমরা ফিরে যাব । সহাবারা এ ঘোষণার সমালোচনা করলেন। তারা বললেন, এটা কেমন কথা? তায়েফ জয় না করে আমরা ফিলে যাব?
রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহবাদের ভিন্নমত শুনে বললেন, আচ্ছা কাল সকালে যুদ্ধে চলো। পরদিন সাহাবারা যুদ্ধে গেলেন, কিন্তু আঘাত খেয়ে ফিরে আসা ছাড়া অন্য কোন লাভ হলো না। এ অবস্থা দেখে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ইনশা আল্লাহ আগামীকাল আমরা ফিরে যাবো। সর্বস্তরের সাহাবারা এ সিদ্ধান্তে সন্তোষ প্রকাশ করলেন। তারা চুপচাপ জিনিসপত্র গুছিয়ে নিতে শুরু করলেন। এ অবস্থা দেখে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মৃদু হাসতে লাগলেন।
ওমরাহ এবং মদীনায় প্রত্যাবর্তন:
রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হোনায়েনের গনীমতের মাল বন্টন শেষে যেরানা থেকে ওমরাহর জন্যে এহরাম বাঁধেন এবং ওমরাহ আদায় করেন। এরপর আত্তাব ইবনে আছিদকে মক্কার গভর্নর করেন।। মোহাম্মদ গাযালী বলেন, এই বিজয়ের সময় যখন আল্লাহ তায়ালা তাঁর মাথায় ফতহে আযিমের মুকুট পরালেন, এই সময়ে এবং আট বছর আগে এই শহরে আসার সময়ের মধ্যে কতো ব্যবধান।
তিনি এই শহরে এমনভাবে এসেছিলেন যে, তিনি ছিলেন নিরাপত্তার প্রত্যাশী। সেই সময় তিনি ছিলেন অচেনা, অপরিচিত, সংশয় ছিলো তাঁর মনে। সে সময় স্থানীয় অধিবাসীরা তাঁকে মর্যাদা দিয়েছিলো আশ্রয় দিয়েছিলো, সাহায্য করেছিলো, তিনি যে নূর সঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন তারা সেই নূরের আনুগত্য করেছিলো। শুধু তাই নয় তার জন্যেই তারা অন্যদের সব রকমের শত্রুতা তুচ্ছ মনে করেছিলো। আট বছর আগে এই মদীনায় হিজরত করার পর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সম্বর্ধনা দেয়া হয়েছিলো তারাই আজ পুনরায় সম্বর্ধনা দিচ্ছে।
আজ মক্কা তাঁর করতলগত, তাঁর নিয়ন্ত্রণে। মক্কার জনগণ তাদের শ্রেষ্ঠত্ব ও মূর্খতা দয়াল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পদতলে বিসর্জন দিয়েছে। তিনি তাদের অতীত দিনের সকল অন্যায় ক্ষমা করে দিয়ে তাদেরকে ইসলামের মাধ্যমে গৌরব ও সাফল্য দান করেছেন। আল্লাহ তায়াল কোরআনে হাকিমে বলেন,
‘নিশ্চয় যে ব্যক্তি সত্যবাদিতা এবং ধৈর্য অবলম্বন করে, তবে আল্লাহ তায়ালা পুন্যশীলদের বিনিময় নষ্ট করেন না। ’[5]
ফুটনোট:
[ফতহুল বারী, ৮ম খন্ড,পৃ.২৭টনোট
[সহীহ বোখারী, ইয়ওমে হোনায়েন অধ্যায়]
[সহীহ মুসলিম, ২য় খন্ড, পৃ-১০০]
[ফতহুল বারী, ৮ম খন্ড,পৃ-৪৫]
- [ ফেকহুস সিরাহ পৃ-৩০৬, মক্কা বিজয় এবং তায়েফের যুদ্ধ বিস্তারিত জানার জন্যে দেখুন যাদুল মায়াদ, ২য় খন্ড, পৃ-১৬০-২০১,ইবনে হিশাম, ২য় খন্ড, পৃ-৩৮৯-৫০১, সহীহ বোখারী, ২য় খন্ড, পৃ-৬১২-৬২৩, ফতহুল বারী, ৮ম খন্ড, পৃ-৩-৮৫]