’দেশকে সমৃদ্ধ করতে বিজ্ঞান শিখতেই হবে’ :মোহাম্মদ কায়কোবাদ (Latest Update)
অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদ কম্পিউটারবিজ্ঞানী। বুয়েটের কম্পিউটারবিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের সাবেক অধ্যাপক, বর্তমানে শিক্ষকতা করছেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে। একসময় তাঁর প্রচেষ্টায় বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো শুরু হয় গণিত অলিম্পিয়াড। ভূমিকা রেখেছেন স্কুল পর্যায়ের পাঠ্যবই সম্পাদনায়ও।
আজ থেকে ১২৫ বছর আগে স্যার জগদীশচন্দ্র বসু রেডিও আবিষ্কার করেছিলেন। সারা পৃথিবীর অন্তত তিনজন আবিষ্কারকের একজন ছিলেন তিনি। কত বড় মাপের আবিষ্কার ছিল সেটা! মুন্সিগঞ্জের একজন বাঙালি সেটা করেছিলেন। জ্ঞান-বিজ্ঞানে, এমনকি মহাপরাধীন ভারতবর্ষে আমাদের যে শ্রেষ্ঠত্ব ছিল, তা আমরা ভুলতে বসেছি। আরেকটা অনুপ্রেরণার কথা বলি। দুই বন্ধু সত্যেন্দ্রনাথ বসু ও মেঘনাদ সাহা। সদ্য স্নাতক এই দুজন সেই সময় যথেষ্ট দুর্বোধ্য আইনস্টাইনের ‘আপেক্ষিকতা তত্ত্ব’ জার্মান ভাষা থেকে ইংরেজিতে অনুবাদ করেন।
প্রশান্ত মহলানবিশের ঐতিহাসিক অবতারণিকাসহ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ২০২০ সালে সেটা আবার প্রকাশ করেছে। ওটাই ছিল প্রথম ইংরেজি অনুবাদ। মজার বিষয় হলো, ইংরেজিতে অনুবাদের জন্য তো জার্মান ভাষা জানতে হবে। আবার আপেক্ষিকতা তত্ত্বও বুঝতে হবে ভালোভাবে। এটা মোটেও সহজ কাজ ছিল না। আর কোনো ইংরেজও তখন সে কাজ করেননি। এটাই ছিল বাঙালির শ্রেষ্ঠত্ব।
এখন আমাদের দেশে প্রকৃত পড়ালেখার আগ্রহ কমে আসছে। আগ্রহ বৃদ্ধির কোনো প্রণোদনাও নেই। তাই আমরা ভাবলাম, কিছু একটা করতে হবে, করা উচিত। তখন আমরা অনেকে গণিত অলিম্পিয়াডের কথা ভাবলাম। আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াড হয় প্রতিবছর। আমি যখন রাশিয়ায় পড়তাম, তখন বিভিন্ন বিষয়ে অলিম্পিয়াড হতো।
গণিত অলিম্পিয়াড, পদার্থবিজ্ঞান অলিম্পিয়াড, রসায়ন অলিম্পিয়াড ইত্যাদি। এমনকি গণিতের শিক্ষার্থীদের জন্য নয়, এমন অনেক অলিম্পিয়াডও আয়োজিত হতো। অন্যান্য বিষয়ের জন্যও এমন অলিম্পিয়াড হতো। সেটা আমাকে দারুণভাবে অনুপ্রেরণা দিয়েছিল। আমি দেশে আসার পরে একটু চেষ্টা করলাম অলিম্পিয়াড করার। তখন সফল হতে পারিনি। পরে মুহম্মদ জাফর ইকবাল দেশে এলেন। আসার সঙ্গে সঙ্গে ওনাকে কথাটা বললাম। উনি লুফে নিলেন।
আমাদের দেশের ছেলেমেয়েরা দেশে বিনা পয়সায় পড়াশোনা করে বিদেশে গিয়ে চাকরি করে। এতে খারাপ কিছু দেখি না। কেউ কেউ বিদেশে থাকতেই পারে। তার যদি দুর্বলতা থাকে, আবার দেশপ্রেম না থাকে, দেশে ঠিকঠাক সুযোগ-সুবিধা না পায়, তাহলে বিদেশে গিয়ে নিজের ভবিষ্যৎ তৈরি করলে তো তাকে দোষারোপ করতে পারি না।