Islamer Bani
ইব্রাহিম আঃ এর কোরবানির ইতিহাস | কোরবানির কাহিনী
ইব্রাহিম আঃ এর কোরবানির ইতিহাস | কোরবানির কাহিনী
ইব্রাহিম আঃ এর কোরবানির ইতিহাস
আসসালামু আলাইকুম সম্মানিত পাঠকবৃন্দ সবাইকে আমাদের ওয়েবসাইটে স্বাগতম। প্রিয় পাঠক আসা করি সবাই আল্লাহর রহমতে ভালো আছেন। বন্ধুরা বর্তমান সময়ে আমরা যে কোন তথ্যের জন্য গুগলে সার্চ করে থাকি। তাই ভিবিন্ন ধরনের পিক ডাউনলোড করতে আমাদের গুগলের সাহায্য নিতে হয়।
প্রিয় পাঠক আজকে আমরা আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি ইব্রাহিম আঃ এর কোরবানির ইতিহাস – কোরবানির কাহিনী। আপনি এই সমস্ত ছবি হোয়াটসঅ্যাপ, ইনস্টাগ্রাম বা অন্য কোন সোশ্যাল মিডিয়াতে ব্যবহার করতে পারেন। আমাদের সংগ্রহে আছে কোরবানি সম্পর্কে কিছু বানী। আমি আশা করি এই ছবিগুলো আপনার প্রোফাইল পিকচার হিসেবে ব্যবহার করতে কাজে লাগবে। তাই দেরি না করে ডাউনলোড করুন আপনার পছন্দের ছবি।
কোরবানির কাহিনী
মহান আল্লাহতায়ালার সম্মানিত নবী হযরত ইব্রাহীম (আঃ) ইরাকে ইসলাম প্রতিষ্ঠার কাজ করছিলেন। তৎকালীন অত্যাচারী বাদশাহ নমরুদ এতে ক্ষিপ্ত হয়ে পড়ে। সে বিভিন্নরকম অত্যাচার-নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছিল। এরকম প্রতিকূল পরিস্থিতিতে আল্লাহতায়ালার নির্দেশে হযরত ইব্রাহিম (আঃ) তাঁর স্ত্রী হযরত সারাকে সাথে নিয়ে শাম দেশে হিজরত করলেন। দুর্ভাগ্যক্রমে সেখানকার বাদশাহ ছিলো জালিম ও ভীষণ বদলোক। বাদশাহর লোকেরা হজরত ইব্রাহীম (আঃ) ও তাঁর সুন্দরী স্ত্রী হযরত সারার আগমনের সংবাদ বাদশাহর দরবারে পৌঁছে দিলে বাদশাহ তাদেরকে ধরে নিয়ে আসতে বলে। বাদশাহর লোকেরা হজরত ইব্রাহীম (আ.) ও তাঁর স্ত্রী সারাকে বাদশাহর দরবারে হাজির করে।
বাদশাহ হযরত ইব্রাহীম (আঃ) এর কাছে জানতে চায়, তার সাথে স্ত্রী লোকটি কে? ইব্রাহীম (আঃ) চিন্তা করলেন, স্ত্রী বললে হয়তো বা তাঁকে মেরে ফেলতে পারে, তাই তিনি বলেন, সে আমার দ্বীনি বোন। বাদশাহ হযরত ইব্রাহীম (আঃ) কে বন্দী করে, আর হযরত সারাকে বাদশাহর বদস্বভাব চরিতার্থ করার জন্যে রেখে দেয়। বাদশাহর কু-প্রস্তাবে হজরত সারা রাজি নাহলে, বাদশাহ তাঁকে হত্যার হুমকি দেয়। অতঃপর হযরত সারা দু’রাকা’আত সালাত আদায় করার অনুমতি চাইলে বাদশাহ তাঁকে সালাত আদায়ের ব্যবস্থা করতে দেয়। হজরত সারা সালাত শেষে আল্লাহ দরবারে ফরিয়াদ করেন যেন আল্লাহ তায়ালা তাঁর সতীত্ব রক্ষা করেন। এরই মধ্যে বাদশাহ অত্যন্ত অসুস্থ ও দুর্বল হয়ে পড়ে। অবস্থা খারাপ দেখে আর বাদশাহর মৃত্যুর জন্য তার লোকেরা হজরত সারাকে দায়ী করবে ভেবে, হযরত সারা বাদশাহর সুস্থতার জন্য দোয়া করেন। একে একে তিন বার একই ঘটনা ঘটলে বাদশাহ হযরত সারার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে। হযরত সারার সতীত্ব দেখে আর এক সতী নারী হযরত হাজেরাকে তাঁর দাসী হিসেবে দিয়ে তাঁদেরকে বিদায় করে দেয়।
হযরত সারা ও হযরত ইব্রাহীম (আঃ) মুক্ত হয়ে সে দেশে বসবাস শুরু করেন। হযরত সারা তাঁর দাসী হযরত হাজেরাকে হজরত ইব্রাহীম (আঃ)এর সাথে বিয়ে দেন। কারণ হজরত সারার বয়স তখন ৯০ বছর আর হজরত ইব্রাহীম (আঃ)এর বয়স তখন ১০০ বছর। তাদের বিয়ের দীর্ঘ সময় পার হলেও, তখনও হযরত সারা মা হতে পারেননি। তিনি ভাবলেন, শেষ বয়সে যদি আল্লাহ তায়ালা মেহেরবানি করে তাঁর স্বামী হজরত ইব্রাহীম (আঃ) কে কোনো সন্তান দান করেন। সে প্রার্থণা কবুল হল, তবে সন্তান জন্ম হল হজরত হাজেরার গর্ভে। হযরত ইব্রাহিম (আঃ) তাঁর নাম রাখলেন, ইসমাইল(আঃ); যিনি আল্লাহ’র রহমতে নিজেও একজন নবী হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেন।
হযরত ইসমাইল (আঃ) এর জন্মের পর, হযরত ইব্রাহীম (আঃ) তাঁর স্ত্রী হযরত হাজেরা ও একমাত্র ছেলেকে আল্লাহতায়ালার নির্দেশে আরবের মক্কায় কাবা ঘরের নিকটবর্তী সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের পাদদেশে নির্জন স্থানে সামান্য খেজুর ও এক মসক পানিসহ রেখে আসেন। হযরত ইব্রাহীম (আঃ) যখন তাঁদের এ অবস্থায় রেখে স্থান ত্যাগ করছিলেন, তখন হযরত হাজেরা প্রশ্ন করছিলেন, আপনি আমাদের এ নির্জন স্থানে রেখে চলে যাচ্ছেন ? হযরত ইব্রাহীম (আঃ) ক্ষীণকন্ঠে জবাব দিয়েছিলেন, হ্যাঁ। আবারো হযরত হাজেরা প্রশ্ন করলেন এটা কি আল্লাহ তায়ালার নির্দেশ ? হযরত ইব্রাহীম (আঃ) আবারও জবাব দিয়েছিলেন, হ্যাঁ। হযরত হাজেরা আল্লাহ তায়ালার ওপর ভরসা করে তাঁর শিশু সন্তানকে নিয়ে সেখানে অবস্থান করলেন।
হযরত হাজেরা ও তাঁর সন্তানের খাদ্য ও পানীয় যখন শেষ হয়ে গেল, তখন তিনি খাদ্য ও পানির সন্ধানে সাফা ও মারওয়া পাহাড়ে দৌড়াদৌড়ি শুরু করলেন। যখন নিরাশ হয়ে ফিরছিলেন, এভাবে ৭বার পানির জন্য ছুটাছুটি করেন। তখন তিনি দেখতে পেলেন তাঁর শিশু পুত্র ইসমাইল (আঃ) পায়ের গোড়ালি দ্বারা জমিনে আঘাত করলে মাটির নিচ থেকে পানির ফোয়ারা প্রবাহিত হতে লাগল। এ সেই ফোয়ারা বা কূপ যা বর্তমানে ‘জমজম’ নামে বিশ্ব মুসলিমের কাছে পরিচিত। সুপেয় পানীয় হিসেবে এই বিখ্যাত কূপের পানি পান করে পরিতৃপ্ত হন মুসলমানরা। এটা কাবাকে কেন্দ্র করে ও হযরত ইসমাইল (আঃ) এর উছিলায় আল্লাহ তায়ালার করুণায় সৃষ্টি হয়েছিল।
মা হাজেরা তাঁর পানির পাত্র পূর্ণ করে নিলেন আর নিজেও তৃপ্তির সাথে পানি পান করলেন। এতে হজরত হাজেরার ক্ষুধা নিবারণ হল ও তাঁর শিশু পুত্রের জন্যে প্রয়োজনীয় দুধেরও ব্যবস্থা হলো। হজরত হাজেরার সাফা ও মারওয়া পাহাড়ে ক্রমাগত ৭ বার দৌড়াদৌড়ি করার কারণে সে ঘটনাকে কেন্দ্র করে আল্লাহ সোবহানাহু ওয়া তায়ালা হজ ও ওমরাহ পালনকারীদের জন্যে সাফা মারওয়া পাহাড়ে ৭ বার দৌড়াদৌড়ি করার বিধান জারি করেছেন। এরপর হযরত ইসমাইল (আঃ) এর যখন হাঁটা-চলা ও খেলাধুলা করার বয়স হল, তখন হযরত ইব্রাহীম (আঃ)কে স্বপ্নে আদেশ করা হল। যিলহজ্জ মাসের রাত্রে তিনি সর্ব প্রথম স্বপ্ন দেখলেন। স্বপ্ন দেখার পর ঐ দিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তিনি চিন্তায় বিভোর যে আল্লাহর পক্ষ থেকে সুস্বপ্ন না দুঃস্বপ্ন, অতঃপর ৯ম রাতে তিনি ঐ একই স্বপ্ন দেখেন তখন তিনি বুঝতে পারেন যে আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি সত্যিকার স্বপ্ন। তার পর ১০ম রাত্রে আবার ঐ একই স্বপ্ন । তাই ঐ দিনে তিনি কুরবানী করতে উদ্যত হন পরপর ৩ রাত স্বপ্ন দেখার পর তার মনে যে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় তারই পরিপ্রেক্ষিতে উক্ত ৩টি দিন বিশেষ নামে বিশেষিত হয়েছে-
যিল হজ্জের ৮ম দিনের নাম “ইয়াওমুত তারবিয়াহ” চিন্তাভাবনার দিন।
৯ম “ইয়াওমুল আরাফাহ” জানার দিন।
১০ম “ইয়াওমুন নাহর” কুরবানীর দিন।
আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘অতঃপর আমি তাকে (হজরত ইব্রাহীম আ. কে) একজন ধৈর্যশীল পুত্র সন্তানের সুসংবাদ দান করলাম। সে যখন পিতার সাথে হাঁটা-চলার উপযোগী হল, তিনি (ইব্রাহীম আঃ) বললেন, হে আমার পুত্র! আমি স্বপ্নে দেখেছি যে, আমি তোমাকে কোরবানি করছি। সুতরাং তোমার মতামত কি? সে (হজরত ইসমাইল আঃ) বললেন, হে আমার পিতা! আপনি যে বিষয়ে আদিষ্ট হয়েছেন তা পালন করুন। আপনি আমাকে আল্লাহর মেহেরবানিতে ধৈর্যশীলদের একজন পাবেন। অতঃপর যখন তাঁরা দু‘জন একমত হলো আর আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছার সামনে আত্মসমর্পণ করল এবং ইব্রাহীম (আ.) ইসমাইল (আ.) কে জবাই করার জন্যে কাত করে শুইয়ে দিলো; তখন আমি ইব্রাহীমকে ডাক দিয়ে বললাম, হে ইব্রাহীম, তুমি তোমার স্বপ্নকে সত্যে রূপ দিয়েছো। নিশ্চয়ই এটা ছিল ইব্রাহীম ও ইসমাইলের জন্যে একটা পরীক্ষা। অতঃপর আমি ইব্রাহীমকে দান করলাম একটি মহা কোরবানির পশু। অনাগত মানুষের জন্যে এ (কোরবানির) বিধান চালু রেখে, তাঁর স্মরণ আমি অব্যাহত রেখে দিলাম। শান্তি বর্ষিত হোক ইব্রাহীমের ওপর। আমি এভাবেই সৎপরায়ণ ব্যক্তিদের প্রতিদান দিয়ে থাকি।’(সূরা আস সফফাত-১০১-১০৯)
পুত্রকে কুরবানী করানো আল্লাহ তায়ালার মূল উদ্দেশ্য ছিলনা উদ্দেশ্য ছিল মুলত পিতা-পুত্রের পরীক্ষা নেওয়া এই স্বপ্ন দেখার পর ইব্রাহীম (আঃ) পুত্রকে কোরবানী করার জন্যে তার স্ত্রী বিবি হাজেরাকে বললেন ছেলে টাকে ভাল পোশাক পরিয়ে প্রস্তুুত করে দাও তাকে একটি কাজে নিয়ে যাব। এদিকে শয়তান বিবি হাজেরাকে ধোকা দিতে শুরু করে। এবং ছেলে ইসমাইল (আঃ) কেও ধোকা দিতে শুরু করে ঐতিহাসিকদের বর্ননা মতে শয়তান তিন বার হযরত ইব্রাহীম (আঃ) কে বিভ্রান্ত করার প্রচেষ্টা চালিয়েছিল, কিন্তুু প্রতি বারে তিনি ৭টি কঙ্কর মেরে শয়তান কে বিতাড়িত করেন। তার স্মৃতি আজও প্রতি বছর হজের সময় পালন করা হয়। হযরত ইব্রাহীম (আঃ) তার ছেলেকে বললেন হেবৎস আমি স্বপ্ন দেখতেছি যে, আমি যেন তোমাকে যবেহ/কুরবানী করছি। সুতারাং তোমার অভিমত কি ? সে বলল হে আমার পিতা আপনাকে যা আদেশ করা হয়েছে আপনি তাই করুন অবশ্যই আমাকে ধৈর্য্যশীলদের অর্ন্তভুক্ত পাবেন। (সুরা সাফফাত ১০২) এভাবে পিতা-পুত্রের সাওয়াল যওয়াবের পরে ছেলে যখন রাজি হয়ে গেল তখন মহান আল্লাহর সামনে নিজ কলিজার টুকরাকে ছিড়ে রেখে দিলেন।
পিতা এবং পুত্র উভয় যখন এক মত হলেন তখন পিতা হযরত ইব্রাহীম (আঃ) পুত্রকে কাত করে শুয়ালেন তখন পুত্র পিতাকে বললেন যে আপনি আমাকে চোখ দেখা অবস্থায় যবেহ করতে পারবেন না। কারন আপনার হয়তো ছেলের মায়া উথলে উঠতে পারে ফলে আপনার ছুরি নাও চলতে পারে আমি হয়ত অধৈর্য্য হয়ে ছটফট করব আপনার কাজে ব্যাঘাত ঘটবে। তাই আমাকে আপনি শক্ত করে বেধে নেন এবং আমাকে উপুড় করে শুইয়ে দিন। এবার ছেলেটির গলায় ছুরি চালাবার পালা। আল্লাহর হুকুমের কাছে আতœ সমার্পনের মূর্ত প্রতীক ইব্রাহীমের হাতে যখন ছেলেটির ঘাড়ে ছুরি চালিয়ে দিল বিশ্ব জাহান তখন কেপে উঠল। সে কি এক অভিনব দৃশ্য। পৃথিবীর ইতিহাসে এ পর্যন্ত এমন কোন ঘটনা ঘটেনি যে পিতার হাতে পুত্রকে কুরবানী ভবিষ্যৎ আর এমন ঘটনা ঘটবে কিনা তাও কে বলতে পারে।
পিতা এবং পুত্র উভয় যখন এক মত হলেন তখন পিতা হযরত ইব্রাহীম (আঃ) পুত্রকে কাত করে শুয়ালেন তখন পুত্র পিতাকে বললেন যে আপনি আমাকে চোখ দেখা অবস্থায় যবেহ করতে পারবেন না। কারন আপনার হয়তো ছেলের মায়া উথলে উঠতে পারে ফলে আপনার ছুরি নাও চলতে পারে আমি হয়ত অধৈর্য্য হয়ে ছটফট করব আপনার কাজে ব্যাঘাত ঘটবে। তাই আমাকে আপনি শক্ত করে বেধে নেন এবং আমাকে উপুড় করে শুইয়ে দিন। এবার ছেলেটির গলায় ছুরি চালাবার পালা। আল্লাহর হুকুমের কাছে আতœ সমার্পনের মূর্ত প্রতীক ইব্রাহীমের হাতে যখন ছেলেটির ঘাড়ে ছুরি চালিয়ে দিল বিশ্ব জাহান তখন কেপে উঠল। সে কি এক অভিনব দৃশ্য। পৃথিবীর ইতিহাসে এ পর্যন্ত এমন কোন ঘটনা ঘটেনি যে পিতার হাতে পুত্রকে কুরবানী ভবিষ্যৎ আর এমন ঘটনা ঘটবে কিনা তাও কে বলতে পারে।
ঐতিহাসিক মিনা প্রান্তরে এ ঘটনা ঘটে। ইমাম সুদ্দী (রাঃ) বলেন একদিকে আল্লাহ হযরত ইব্রাহীম (আঃ) কে হুকুম দিয়েছেন নিজ হাতে তুমি তোমার প্রিয় পাত্র নিজ ছেলেকে কুরবানী কর বা যবেহ কর অন্য দিকে তিনি ছুরিকে নির্দেশ দিয়েছেন তুমি মোটেই কেটোনা ফলে ছুড়ি ও তার ঘাড়ের মাঝখানে আল্লাহর কুদরতে একটি পিতলের পাত আর সৃষ্টি করে। সে জন্য ইব্রাহিম (আঃ) বাব বাব ছুরি চালালেও কোন কাজ হচ্ছিলনা। এ পরিস্তিতিতে বিশ্ব জগতের সবাই যখন হতভম্ভ এবং হতবাক ও শ্বাসরুদ্ধ তখন মহান আল্লাহ তার রহস্য ফাস করে দিয়ে জান্নাত থেকে জিব্রাইল (আঃ) এর মাধ্যমে একটি দুম্বা পাঠিয়ে দিলেন এবং ইসমাইলকে বাচিয়ে নিয়ে ইব্রাহিমের অজান্তে সে দুম্বাটি তার দ্বারা যবেহ করিয়ে দিয়ে ঘোষনা করলেন তখন আমি তাকে ডেকে বললাম: হে ইব্রাহীম তুমি স্বপ্নকে সত্য প্রমান করে দেখালে। আমি এই রূপেই খাটি বান্দাদের কে পুরস্কার দিয়ে থাকি। নিশ্চয়ই এটা ছিল একটি সু ¯পষ্ট পরীক্ষা। আর আমি তাকে মুক্ত করলাম এক মহান যবেহের বিনিময়। (সুরা সফফাত ১০৪-১০৭)
হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) সহ অনেক মুফাসসিরীনদের এর মতে ইব্রাহীমের কাছে যে দুম্বাটি পাঠানো হয়েছিল সেটি জান্নাতে ৪০ বছর ধরে লালন পালন করা হয়েছিল। হযরত ইব্রাহিম (আঃ) যখন ইসমাইল কে যবেহ করেছিলেন। তখন জিব্রাইল (আঃ) বলেছিলেন আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার। অত:পর ইব্রাহিম (আঃ) বলেন আল্লাহু আকবার। ওয়ালিল্লাহেল হামদ। তার পর থেকে এ তাকবীরটি চিরস্থায়ী সুন্নাতে পরিনত হয়। আর আল্লাহ বলেন আমি তার জন্য এ বিষয়টি ভবিষ্যৎ বংশধরদের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত রাখলাম। সালাম বর্ষিত হোক ইব্রাহীমের উপর (সাফফাত-১০৮-১০৯)আল্লাহর ঘোষনা মোতাবেক তখন থেকে চলে আসছে এ ইব্রাহীম (আঃ) এর আদর্শের বাস্তবায়ন। তাই আজ পৃথিবীর লক্ষ লক্ষ মানুষ আল্লাহর হুকুমের প্রতি পালানের সাথে সাথে প্রতি বছর ইব্রাহিমের স্মৃতি পালন করে পাপ মোচন করছে। এবং ইব্রাহিম (আঃ) এর আদর্শ কে কিয়ামত পর্যন্ত চিরস্থায়ী করে দিয়েছেন। যা বিশ্বের তাওহীদ বাদীদের হৃদয় বিজয়ী।
এই সুমহান ঘটনাকে চিরস্মরণীয় করে রাখার জন্য এবং আল্লাহ’র উদ্দেশ্যে নিজের কুপ্রবৃত্তিকে বিসর্জন দেয়ার নিমিত্তে কোরবানি করাকে সামর্থবানদের জন্য ওয়াজিব করা হয়। যদিও কোরবানির মনস্তাত্ত্বিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক সুফল আরো ব্যাপক ও বিশদ।
দুনিয়ায় মানব বসতির শুরুতেই কোরবানির প্রচলন শুরু হয়েছে। হযরত আদম আঃ থেকে কুরবানী শুরু হয়।
ইসলামের প্রথম কুরবানীর মূল ঘটনা : যখন আদম ও হাওয়া (আ.) পৃথিবীতে আগমন করেন এবং তাদের সন্তান প্রজনন ও বংশ বিস্তার আরম্ভ হয়, তখন হাওয়া (আ.) এর প্রতি গর্ভ থেকে জোড়া জোড়া (জময) অর্থাৎ একসাথে একটি পুত্র ও একটি কন্যা এরূপ জময সন্তান জন্মগ্রহণ করত। কেবল শীস (আ.) ব্যতিরেকে। কারণ, তিনি একা ভূমিষ্ঠ হয়েছিলেন। তখন ভাই-বোন ছাড়া আদম (আ.) এর আর কোন সন্তান ছিল না। অথচ ভাই-বোন পরস্পর বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারে না। তাই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা উপস্থিত প্রয়োজনের খাতিরে আদম (আ.) এর শরীয়তে বিশেষভাবে এ নির্দেশ জারি করেন যে, একই গর্ভ থেকে যে যমজ পুত্র ও কন্যা জন্মগ্রহণ করবে, তারা পরস্পর সহোদর ভাই-বোন হিসেবে গণ্য হবে। তাদের মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্ক হারাম। কিন্তু পরবর্তী গর্ভ থেকে জন্মগ্রহনকারী পুত্রের জন্য প্রথম গর্ভ থেকে জন্মগ্রহণকারীনি কন্যা সহোদরা বোন হিসেবে গণ্য হবে না। তাদের মধ্যে পরস্পর বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া বৈধ। সুতরাং সে সময় আদম (আ.) একটি জোড়ার মেয়ের সাথে অন্য জোড়ার ছেলের বিয়ে দিতেন। ঘটনাক্রমে কাবীলের সাথে যে সহোদরা জন্ম নিয়েছিল সে ছিল পরমা সুন্দরী। তার নাম ছিল আকলিমা। কিন্তু হাবিলের সাথে যে সহোদরা জন্ম নিয়েছিল সে দেখতে অতটা সুন্দরী ছিল না। সে ছিল কুশ্রী ও কদাকার। তার নাম ছিল লিওযা। বিবাহের সময় হলে শরয়ী ‘নিয়মানুযায়ী হাবীলের সহোদরা কুশ্রী বোন কাবীলের ভাগে পড়ল। ফলে আদম (আ.) তৎকালীন শরীয়তের আইনের পরিপ্রেক্ষি তে কাবীলের আবদার প্রত্যাখ্যান করলেন এবং তাকে তার নির্দেশ মানতে বললেন। কিন্তু সে মানল না। এবার তিনি তাকে বকাঝকা করলেন। তবুও সে ঐ বকাঝকায় কান দিল না। অবশেষে আদম (আ.) তার এ দু‘সস্তান হাবীল ও কাবীলের মতভেদ দূর করার উদ্দেশ্যে বললেন, ‘তোমরা উভয়ে আল্লাহর উদ্দেশ্যে কুরবানী পেশ কর, যার কুরবানী গৃহীত হবে, তার সাথেই আকলিমার বিয়ে দেয়া হবে।’ সে সময় কুরবানী গৃহীত হওয়ার একটি সুস্পষ্ট নিদর্শন ছিল যে, আকাশ থেকে একটি অগ্নিশিখা এসে সে কুরবানীকে ভষ্মীভূত করে ফেলত। আর যার কুরবানী কবূল হতো না তারটা পড়ে থকত। যাহোক, তাদের কুরবানীর পদ্ধতি সম্পর্কে যা জানা যায় তা হলো- কাবীল ছিল চাষী। তাই তিনি গমের শীষ থেকে ভাল ভাল মালগুলো বের করে নিয়ে বাজে মালগুলোর একটি আটি কুরবানীর জন্য পেশ করল। আর হাবীল ছিল পশুপালনকারী। তাই সে তার জন্তুর মধ্যে থেকে সবচেয়ে সেরা একটি দুম্বা কুরবানীর জন্য পেশ করল। এরপর নিয়মানুযায়ী আকাশ থেকে অগ্নিশিখা এসে হাবীলের কুরবানীটি ভষ্মীভুত করে দিল। [ফতহুল ক্বাদীরের বর্ণনায় পাওয়া যায় যে, হাবীলের পেশকৃত দুম্বাটি জান্নাতে উঠিয়ে নেয়া হয় এবং তা জান্নাতে বিচরণ করতে থাকে। অবশেষে ইসমাঈল যাবিহুল্লাহ (আ.) কে ঐ দুম্বাটি পাঠিয়ে বাঁচিয়ে দেয়া হয়।] আর কাবীলের কুরবানী যথাস্থানেই পড়ে থাকল। অর্থাৎ হাবীলেরটি গৃহীত হলো আর কাবীলেরটি হলো না। কিন্তু কাবীল এ আসমানী সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারল না। এ অকৃতকার্যতায় কাবীলের দুঃখ ও ক্ষোভ আরো বেড়ে গেল। সে আত্মসংবরণ করতে পারল না এবং প্রকাশ্যে তার ভাইকে বলল, ‘আমি অবশ্যই তোমাকে হত্যা করব। হাবিল তখন ক্রোধের জবাবে ক্রোধ প্রদর্শন না করে একটি মার্জিত ও নীতিগত বাক্য উচ্চারণ করল, এতে কাবীলের প্রতি তার সহানুভূতি ও শুভেচ্ছা ফুটে উঠেছিল। হাবীল বলেছিল, ‘ তিনি মুত্তাক্বীর কর্মই গ্রহণ করেন। সুতরাং তুমি তাক্বওয়ার কর্মই গ্রহণ করো। তুমি তাক্বওয়া অবলম্বন করলে তোমার কুরবানীও গৃহীত হতো। তুমি তা করোনি, তাই তোমার কুরবানী প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। এতে আমার দোষ কোথায়?ৃ..তবুও এক পর্যায়ে কাবীল হাবীল কে হত্যা করে ফেলল। (তাফসীর ইবনু কাসীর, দুররে মনসূর, ফতহুল বায়ান, ৩/৪৫ ও ফতহুল ক্বাদীর, ২/২৮-২৯) কুরআনে বর্ণিত হাবীল ও কাবীল কর্তৃক সম্পাদিত কুরবানীর এ ঘটনা থেকেই মূলত কুরবানীর ইতিহাসের গোড়াপত্তন হয়েছে। এ ঘটনায় আমরা দেখতে পেলাম যে, কুরবানী দাতা ‘হাবীল’, যিনি মনের ঐকান্তিক আগ্রহ সহকারে আল্লাহর নৈকট্য ও সন্তুষ্টি লাভের জন্যে একটি সুন্দর দুম্বা কুরবানী হিসেবে পেশ করেন। ফলে তার কুরবানী কবূল হয়। পক্ষান্তরে কাবীল, সে অমনোযোগী অবস্থায় কিছু খাদ্যশস্য কুরবানী হিসেবে পেশ করে। ফলে তার কুরবানী কবূল হয়নি। সুতরাং প্রমাণিত হলো কুরবানী মনের ঐকান্তিক আগ্রহ ছাড়া কবূল হয় না। তারপর থেকে বিগত সকল উম্মতের উপরে এটা জারি ছিল। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, প্রত্যেক উম্মতের জন্য আমি কুরবানীর বিধান রেখেছিলাম, যাতে তারা উক্ত পশু যবেহ করার সময় আল্লাহর নাম স্মরণ করে এ জন্য যে, তিনি চতুষ্পদ জন্তু থেকে তাদের জন্য রিযিক নির্ধারণ করেছেন। [সূরা হাজ্জ (২২):৩৪]।
এ আয়াতের ব্যাখ্যায় আল্লামা নাসাফী ও যামাখশারী বলেন, ‘আদম (আ.) থেকে মুহাম্মাদ (সা.) পর্যন্ত প্রত্যেক জাতিকে আল্লাহ তা‘আলা তার নৈকট্য লাভের জন্য কুরবানীর বিধান দিয়েছেন। (তাফসীরে নাসাফী ৩/৭৯; কাশশাফ, ২/৩৩)।
আদম (আ.) এর যুগে তারই পুত্র কাবীল ও হাবীলের কুরবানীর পর থেকে ইবরাহীম (আ.) পর্যন্ত কুরবানী চলতে থাকে। প্রকৃতপক্ষে কুরবানীর ইতিহার ততটা প্রাচীন যতটা প্রাচীন দ্বীন-ধর্ম অথবা মানবজাতির ইতিহার। মানবজাতির জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে যত শরীয়ত নাযিল হয়েছে, প্রত্যেক শরীয়তের মধ্যে কুরবানী করার বিধান জারি ছিল। প্রত্যেক উম্মতের ইবাদতের এ ছিল একটা অপরিহার্য অংশ। তবে ঐসব কুরবানীর কোন বর্ণনা কোন গ্রন্থে পাওয়া যায় না। মূলত সেসব কুরবানীর নিয়ম-কানুন আমাদেরকে জানানো হয়নি। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে কুরবানির ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট স্মরণ করে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের হুকুম পালন করে ইসলামের নিদর্শনগুলোকে যথাযথ সম্মান পদর্শন করার তাওফিক দিক। আমীন ।