Islamer Bani

শবে বরাতের আলোচনা | শবে বরাতের ফজিলত | শবে বরাতের নামাজ কোরআন ও হাদিসের আলোকে

শবে বরাতের আলোচনা | শবে বরাতের ফজিলত | শবে বরাতের নামাজ কোরআন ও হাদিসের আলোকে 

আসছালামু আলাইকু? সবাই কেমন আছেন? আসা করি আল্লাহর রহমতে সবাই অনেক ভালো আছেন।
আজকে আমরা পবিত্র শবে বরাত নিয়ে কোরআন ও হাদিসের আলোকে আলোচনক করবো।
প্রথম জেনে জেনে নেই।   

শবে বরাত’ এর অর্থ কি ?আল-কুরআনে শবে বরাতের কোন উল্লেখ আছে ?

‘শব’ একটি ফারসী শব্দ এর অর্থ রাত। ‘বারায়াত’কে যদি আরবী শব্দ ধরা হয় তাহলে এর অর্থ হচ্ছে সম্পর্কচ্ছেদ, পরোক্ষ অর্থে মুক্তি।
আল-কুরআনে শবে বরাতের কোন উল্লেখ নেই…।
শবে বরাত বলুন আর লাইলাতুল বারায়াত বলুন কোন আকৃতিতে শব্দটি কুরআন মাজীদে খুজে পাবেন না। সত্য কথাটাকে সহজভাবে বলতে গেলে বলা যায় পবিত্র কুরআন মাজীদে শবে বরাতের কোন আলোচনা নেই। সরাসরি তো দূরের কথা আকার ইংগিতেও নেই।
অনেককে দেখা যায় শবে বরাতের গুরুত্ব আলোচনা করতে যেয়ে সূরা দুখানের প্রথম চারটি আয়াত পাঠ করেন। আয়াতসমূহ হলঃ
حم ﴿১﴾ وَالْكِتَابِ الْمُبِينِ ﴿২﴾ إِنَّا أَنْزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةٍ مُبَارَكَةٍ إِنَّا كُنَّا مُنْذِرِينَ ﴿৩﴾ فِيهَا يُفْرَقُ كُلُّ أَمْرٍ حَكِيمٍ ﴿৪﴾ (الدخان: ১-৪)
অর্থঃ হা-মীম। শপথ সুস্পষ্ট কিতাবের। আমিতো এটা অবতীর্ণ করেছি এক বরকতময় রাতে। আমি তো সতর্ককারী। এই রাতে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয় স্থিরকৃত হয়। (সূরা দুখান, ১-৪)
শবে বরাত পন্থী আলেম উলামারা এখানে বরকতময় রাত বলতে ১৫ শাবানের রাতকে বুঝিয়ে থাকেন। আমি এখানে স্পষ্টভাবেই বলব যে, যারা এখানে বরকতময় রাতের অর্থ ১৫ শাবানের রাতকে বুঝিয়ে থাকেন তারা এমন বড় ভুল করেন যা আল্লাহর কালাম বিকৃত করার মত অপরাধ। কারণঃ
(এক) কুরআন মাজীদের এ আয়াতের তাফসীর বা ব্যাখ্যা সূরা আল-কদর দ্বারা করা হয়। সেই সূরায় আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেনঃ
إِنَّا أَنْزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةِ الْقَدْرِ ﴿১﴾ وَمَا أَدْرَاكَ مَا لَيْلَةُ الْقَدْرِ ﴿২﴾ لَيْلَةُ الْقَدْرِ خَيْرٌ مِنْ أَلْفِ شَهْرٍ ﴿৩﴾ تَنَزَّلُ الْمَلَائِكَةُ وَالرُّوحُ فِيهَا بِإِذْنِ رَبِّهِمْ مِنْ كُلِّ أَمْرٍ ﴿৪﴾ سَلَامٌ هِيَ حَتَّى مَطْلَعِ الْفَجْرِ ﴿৫﴾
অর্থঃ আমি এই কুরআন নাযিল করেছি লাইলাতুল কদরে। আপনি জানেন লাইলাতুল কদর কি? লাইলাতুল কদর হল এক হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। এতে প্রত্যেক কাজের জন্য মালাইকা (ফেরেশ্‌তাগণ) ও রূহ অবতীর্ণ হয় তাদের পালনকর্তার নির্দেশে। এই শান্তি ও নিরাপত্তা ফজর পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। (সূরা কাদর, ১-৫)
অতএব বরকতময় রাত হল লাইলাতুল কদর। লাইলাতুল বারায়াত নয়। সূরা দুখানের প্রথম সাত আয়াতের ব্যাখ্যা হল এই সূরা আল-কদর। আর এ ধরনের ব্যাখ্যা অর্থাৎ আল-কুরআনের এক আয়াতের ব্যাখ্যা অন্য আয়াত দ্বারা করা হল সর্বোত্তম ব্যাখ্যা।

ইসলামি তমদ্দুন তথা মুসলিম কৃষ্টিতে যেসব দিবস ও রজনী বিখ্যাত, এর মধ্যে পাঁচটি রাত বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এই বিশেষ পাঁচটি রাত হলো: দুই ঈদের রাত্রিদ্বয়, শবে মেরাজ, শবে বরাত ও শবে কদর। যাঁরা রাতের ইবাদতের গুরুত্ব অনুধাবন করেন, তাঁরা প্রতিটি রাতকে শবে বরাত বানিয়ে নেন।


শবে বরাতের ফজিলত

হজরত আয়িশা সিদ্দিকা (রা.) বলেন, একবার রাসুলুল্লাহ (সা.) নামাজে দাঁড়ালেন এবং এত দীর্ঘ সেজদা করলেন যে আমার ধারণা হলো, তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন; আমি তখন উঠে তাঁর পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলি নাড়া দিলাম, তাঁর বৃদ্ধাঙ্গুলি নড়ল; তিনি সেজদা থেকে উঠলেন এবং নামাজ শেষ করে আমাকে লক্ষ করে বললেন, হে আয়িশা! তোমার কি এ আশঙ্কা হয়েছে? আমি উত্তরে বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ (সা.)! আপনার দীর্ঘ সেজদা থেকে আমার আশঙ্কা হয়েছিল আপনি মৃত্যুবরণ করেছেন কি না? নবীজি (সা.) বললেন, তুমি কি জানো এটা কোন রাত? আমি বললাম, আল্লাহ ও আল্লাহর রাসুলই ভালো জানেন। তখন নবীজি (সা.) বললেন, এটা হলো অর্ধশাবানের রাত; এ রাতে আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদের প্রতি মনোযোগ দেন; ক্ষমাপ্রার্থনাকারীদের ক্ষমা করে দেন, অনুগ্রহ প্রার্থীদের অনুগ্রহ করেন। আর বিদ্বেষ পোষণকারীদের তাদের অবস্থাতেই ছেড়ে দেন। (শুআবুল ইমান, তৃতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩৮২)।
হজরত আয়িশা (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, নবীজি (সা.) এ রাতে মদিনার কবরস্থান ‘জান্নাতুল বাকি’তে এসে মৃতদের জন্য দোয়া ও ইস্তিগফার করতেন। তিনি আরও বলেন, নবীজি (সা.) তাঁকে বলেছেন, এ রাতে বনি কালবের ভেড়া বকরির পশমের (সংখ্যার পরিমাণের) চেয়েও বেশিসংখ্যক গুণাহগারকে আল্লাহ ক্ষমা করে দেন। (তিরমিজি শরিফ, হাদিস: ৭৩৯)।


শবে বরাতের নফল নামাজ ও ইবাদত


একটি বিষয় খুব ভালোভাবে আমাদের বোঝা উচিত, শবে বরাতের কোনো নির্দিষ্ট নামাজ কিংবা আমলের কথা কুরআন ও হাদিসের কোথাও নেই। কোনো বিশেষ নিয়মনীতি নির্ধারণ করে দেওয়া হয়নি। যেমন আমাদের মধ্যে অনেকে শবে বরাতের জন্য আলাদা নামাজ আছে বলে মনে করেন। তাঁরা মনে করেন, এই নামাজের নিয়মনীতিও সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র। এ-জাতীয় ধারণা অবশ্যই ভিত্তিহীন। তবে এ রাতে বেশি বেশি ইস্তিগফার করা, আল্লাহর কাছে স্বীয় গোনাহের মাফীর জন্য কান্নাকাটি করা, দুআ করা, কুরআন তিলাওয়াত করা। অনির্ধারিতভাবে নফল নামায পড়া, জিকির করা ইত্যাদী ইবাদত করা উত্তম ও ফযীলতপূর্ণ। এসবই নফল ইবাদত। করলে সাওয়াব হবে না করলে কোন গোনাহ নেই। বরং শবে বরাতে আপনি যেভাবে ভালোবাসেন সেভাবেই আল্লাহকে ডাকুন। কারণ এ রাত একান্তই আপনার। আপন স্রষ্টার কাছে নির্জনে প্রাণ খুলে নিবেদন করুন নিজের সব চাওয়া ও পাওয়ার কথা। দুঃখ ও বেদনা এবং কষ্ট ও ভালোবাসার সব আর্তি ও ফরিয়াদ তাঁকে জানান নিঃসঙ্কোচে, তিনিই তো পরম আপন আমাদের, এমন আর কে আছে যার কাছে না চাইলে তিনি অসন্তুষ্ট হন! তাই সারা রাত কিংবা অর্ধরাত, নামাজ কিংবা শুধু তিলাওয়াত অথবা জিকির, যেভাবে আপনি ভালোবাসেন এবং যা আপনি নিজে শুদ্ধভাবে করতে জানেন, সেটুকুই করুন। পরম করুণাময় আল্লাহ তো আপনার অন্তর পর্যবেক্ষণ করছেন, কয় রাকাত নামাজ পড়ছেন কিংবা কতো টাকা দান করছেন, সেটি তার কাছে মোটেও বিবেচ্য নয়। 

তবে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যখন শাবানের মধ্য দিবস আসবে, তখন তোমরা রাতে নফল ইবাদত করবে ও দিনে রোজা পালন করবে। (ইবনে মাজাহ)। ইবাদতের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হলো নামাজ; সুতরাং নফল ইবাদতের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হলো নফল নামাজ। প্রতিটি নফল ইবাদতের জন্য তাজা অজু বা নতুন অজু করা মোস্তাহাব। বিশেষ ইবাদতের জন্য গোসল করাও মোস্তাহাব। ইবাদতের জন্য দিন অপেক্ষা রাত শ্রেয়তর। হজরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেছেন, ১৪ শাবান দিবাগত রাত যখন আসে, তখন তোমরা এ রাতটি ইবাদত-বন্দেগিতে কাটাও এবং দিনের বেলায় রোজা রাখো; কেননা, এদিন সূর্যাস্তের পর আল্লাহ তাআলা দুনিয়ার আসমানে নেমে আসেন এবং আহ্বান করেন; কোনো ক্ষমাপ্রার্থী আছ কি? আমি ক্ষমা করব; কোনো রিজিকপ্রার্থী আছ কি? আমি রিজিক দেব; আছ কি কোনো বিপদগ্রস্ত? আমি উদ্ধার করব। এভাবে ভোর পর্যন্ত আল্লাহ তাআলা মানুষের বিভিন্ন প্রয়োজনের কথা উল্লেখ করে আহ্বান করতে থাকেন। (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ১৩৮৪)।


রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যখন শাবানের মধ্য দিবস আসে, তখন তোমরা রাতে নফল ইবাদত করো ও দিনে রোজা পালন করো। (সুনানে ইবনে মাজাহ)। এ ছাড়া প্রতি মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ আইয়ামে বিজ-এর নফল রোজা তো রয়েছেই। যা আদি পিতা হজরত আদম (আ.) পালন করেছিলেন এবং আমাদের প্রিয় নবী (সা.)–ও পালন করতেন; যা মূলত সুন্নত। সুতরাং তিনটি রোজা রাখলেও শবে বরাতের রোজা এর অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। বিখ্যাত মুহাদ্দিস ফকিহ হাফিজ ইবনে রজব (রা.) বলেন, এদিনের রোজা আইয়ামে বিজ, অর্থাৎ চান্দ্রমাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখের রোজার অন্তর্ভুক্ত। (লাতায়িফুল মাআরিফ, পৃষ্ঠা ১৫১)।

ইমাম শাফেয়ী ( রহমতুল্লাহি আলাইহি )-এর মতে, শাবানের ১৫তম রাতে অধিক অধিক দুআ কবুল হয়ে থাকে।  ( কিতাবুল উম্ম, ১ম খণ্ড-২৩১পৃ )
ফিকহে হাম্বলীঃ
শাইখ ইবনে মুফলী হাম্বলী ( রহমতুল্লাহি আলাইহি ), আল্লাম মনসুর আল বাহুতী, ইবনে রজর হাম্বলী প্রমুখ হাম্বলী উলামায়ে কেরামের মতে শবে বরাতে ইবাদত করা মুস্তাহাব। ( আল মাবদা, ২য় খণ্ড-২৭পৃ, কাশফুল কিনা,১ম খণ্ড-৪৪৫পৃ, লাত্তায়িফুল মাআরিফ-১৫১পৃ )
ফিকহে মালেকীঃ
ইবনে হাজ্ব মালেকী ( রহমতুল্লাহি আলাইহি ) বলেন, সালফে সালেহীনগণ এ রাতকে যথেষ্ট সম্মান করতেন এবং এর জন্য পূর্ব থেকে প্রস্তুতি গ্রহণ করতেন। ( আল মাদখাল,১ম খণ্ড-২৯২পৃ )
শাইখ ইবনে তাইমিয়ার অভিমতঃ
শাইখ আব্দুল আব্বাস আহমেদ ইবনে তাইমিয়া ( রহমতুল্লাহি আলাইহি ) বলেন, পনেরো শাবানের রাতের ফজীলত সম্পর্কে একাধিক মারফু হাদীস ও আসারে সাহাবা বর্ণিত রয়েছে। এগুলো দ্বারা এ রাতের ফজীলত ও মর্যাদা প্রমাণিত হয়। সালফে সালেহীনদের কেউ কেউ এ রাতে নফল নামাজের ব্যাপারে যত্নবান হতেন। আর শাবানের রোযার ব্যাপারে তো সহীহ হাদীসসমূহই রয়েছে।
                                                    ( ইকতিযাউস সিরাতুল মুস্তাকিম,২য় খণ্ড-৬৩১পৃ )
পরদিন রোযা রাখা
হযরত আলী ( রাদীয়াল্লাহু তাআলা আনহু ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ) বলেছেন,পনেরো শাবানের (চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাত) যখন আসে, তখন তোমরা রাতটি ইবাদত বন্দেগীতে কাটাও এবং দিনে রোযা রাখ। কেননা এ রাতে সূর্যাস্তের পর আল্লাহ তাআলা পড়থম আসমানে আসেন এবং বলেন, কোন ক্ষমা প্রার্থনাকারী আছে কি? আমি তাকে ক্ষমা করবো। আছে কি কোন রিযিকপ্রার্থী? আমি তাকে রিযিক দিব। এভাবে সুবহে সাদিক পর্যন্ত আল্লাহ তাআলা মানুষের প্রয়োজনের কথা বলে তাদেরকে ডাকতে থাকেন।
     ( সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস-১৩৮৪, বাইহাকী-শুআবুল ঈমান, হাদীস-৩৮২৩ )
এই রিওয়াতটির সনদ যইফ। কিন্তু মুহাদ্দিসীনে কেরামের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হল, ফাযায়েলের ক্ষেত্রে যইফ হাদীস গ্রহণযোগ্য। তাছাড়া শাবান মাসে বেশী বেশী নফল রোযা রাখার কথা বহু হাদীসে এসেছে এবং আইয়ামে বীজ তথা প্রতি চন্দ্রমাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে রোযা রাখার বিষয়টি সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। ( ইসলাহী খুতুবাত, ৪র্থ খন্ড-২৬৬পৃ )

শবে বরাতে আলোকসজ্জা করা

শবে বরাতে আলোকসজ্জা করা শরীয়ত সম্মত নয়। ইতিহাসে উল্লেখ করা হয়েছে যে, আলোকসজ্জা হচ্ছে গ্রীক ধর্মের একটি ধর্মীয় প্রথা। সেখান থেকে পর্যায়ক্রমে হিন্দু ধর্মের ধর্মীয় প্রথা হিসেবে রূপ লাভ করে, যা শেষ পর্যন্ত দেয়ালী পূজা নামে মশহূর হয়। আলোকসজ্জা সেখান থেকে পর্যায়ক্রমে মুসলমানদের মধ্যে প্রবেশ করে যা প্রকৃতপক্ষে দ্বীন ইসলামের শেয়ার বা তর্জ-তরীক্বার অন্তর্ভুক্ত নয়। শবে বরাতের আগমন উপলক্ষে মসজিদ, কবরস্থান ও বাসাবাড়িতে আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করা হয়। এর দ্বারা নিজের অর্থ অপচয় তো হয়ই উপরন্তু কাফেরদের সঙ্গে সাদৃশ্যতারও প্রতিফলন ঘটে। যা শরিয়তের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ নাজায়েজ বা হারাম।এ বিষয়ে নিম্নে বিজ্ঞ আলেমদের কিছু বক্তব্য তুলে ধরা হলো। * আল্লামা ইবন নুজাইম হানাফি বলেন, শবেবরাতে বিভিন্ন গলি ও বাজারে রংবেরঙের আলোকসজ্জা করা বিদয়াত, তেমনি মসজিদেও। * শায়খ আলী মাহফুজও এরূপ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, আল্লামা আবু শামা বলেন, বিদয়াতিরা যা থেকে বিষয়টি উদ্ভাবন করেছে এবং যদ্বারা তারা দ্বীনের সীমালঙ্ঘন করেছে, দ্বীনের মাঝে তারা অগ্নিপূজার রীতিনীতির আদলে যেটিকে চালু করেছে এবং নিজেদের দ্বীনকে ক্রীড়া ও আনন্দের বিষয়ে পরিণত করেছে তা হচ্ছে, শবেবরাত উপলক্ষে আলোকসজ্জা। যার সর্ব প্রথম প্রাদুর্ভাব ঘটে বারামিকা জাতির মাঝে। এরপর তারা মুসলমানদের মাঝেও এটিকে প্রবেশ করিয়ে দেয়, মূলত অগ্নিপূজাই তাদের উদ্দেশ্য। * হজরত শাহ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী (রহ.) বলেন, যেসব জঘন্যতম বিদয়াত ভারতবর্ষে অধিকাংশ এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে, তন্মধ্যে রয়েছে (শবেবরাত প্রভৃতি উপলক্ষে) আলোকসজ্জা তথা বাসাবাড়ি, দেয়াল অট্টালিকা বৈচিত্র্যময় লাইট দ্বারা সজ্জিত করা, এর মাধ্যমে পরস্পর প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হওয়া, আগুন নিয়ে আনন্দ খেলার লক্ষ্যে দলবদ্ধ হওয়া। যেগুলোর কোনো ভিত্তি বিশুদ্ধ কিতাবগুলোতে নেই। এ ব্যাপারে কোনো দুর্বল হাদিস কিংবা কমপক্ষে একটি জাল হাদিসও পাওয়া যায় না। ভারতবর্ষ ছাড়া অন্যান্য মুসলিম এলাকায়ও এর প্রচলন নেই। 

আর কিছু 

নবীজি (সা.) সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, এ মহা ফজিলতের রাতেও আল্লাহ পাক দুই শ্রেণির লোকের ডাকে সাড়া দেন না। প্রথমত ওই মুশরিক যে আল্লাহর সঙ্গে অন্যকে শরিক করে এবং দ্বিতীয়ত ওই মুসলমান ব্যক্তি যার সঙ্গে অন্য কোনো মুসলমানের ঝগড়া-বিবাদ রয়েছে এবং তারা পরস্পর সম্পর্কহীন। এমন সম্পর্কচ্ছেদে লিপ্ত দুজন নিজেদের মধ্যকার বিবাদ না মেটানো পর্যন্ত আল্লাহ পাক তাদের সব প্রার্থনাকে অপেক্ষার তালিকায় রেখে দেন। আজকের এ স্বার্থপরতা ও অস্থির সময়ে এ বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সামান্য তুচ্ছ বিষয় নিয়ে কর্মস্থল কিংবা পাড়া-মহল্লা অথবা আত্মীয়-স্বজনের কারো সঙ্গে হয়তো আপনার দ্বন্দ্ব হয়েছে এবং আপনারা একে অপরের মুখ দেখা থেকে এড়িয়ে চলছেন। বিষয়টি সমাজের দৃষ্টিতে খুব সাধারণ মনে হলেও মহান আল্লাহর কাছে মোটেও তুচ্ছ নয়। তাই বিবাদমান এমন দুজনের দুআ তিনি গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকেন। বরং তিনি অপেক্ষায় থাকেন, কবে তার এ দুজন বান্দা সব বিবাদ ভুলে বুকে বুক মিলিয়ে একই কাতারে এসে দাঁড়াবে, সেদিনই তিনি তাদের প্রার্থনার ডাকে সাড়া দেবেন। নিজের দ্বীন ও দুনিয়ার অসামান্য সফলতা এবং কল্যাণের জন্য এ পৃথিবীর সামান্য স্বার্থের সংঘাত ভুলে গিয়ে আল্লাহর জন্য ওই মানুষটিকে বুকে মিলিয়ে নেওয়াই তো প্রকৃত মুসলমানের পরিচয়। চারিদিকে নিরাশা ও বিপদের এ কঠিন দুঃসময়ে বারবার অনুভূত হচ্ছে আল্লাহকে ডাকার ও তার কাছে আত্মসমর্পণের প্রয়োজনীয়তা। তিনি ছাড়া তো আমাদের আর কোনো সহায় নেই। শক্তি কিংবা বুদ্ধি দিয়ে নয়, তার সামান্য করুণার বর্ষণে ভেসে যাবে আমাদের সব মনোবেদনা ও জীর্ণতা। 

মুলকথাঃ আমরা আজকের আলোচনা থেকে জানতে পারলাম,কোরআনুল কারীমে সরাসরি শবে বরাতের কথা উল্লেখ নেই কিন্তু হাদিসে এর কথা উল্লেখ আছে।অনেকে আলেম এই হাদিস গুলোকে জয়িফ বলেছেন আবাত অনেকে সহিহ বলেছেন।

এই বিষয় নিয়ে তর্কে কখনো জরাবেন না। কেননা ইবাদত সময় করা যায় তবে আল্লাহর নবী সমস্ত সাবান মাসে বেশি বেশি রোজা রাখতেন ও ইবাদত করতেন।

সঠীক নিয়মে এ রাতে আমল করেই কেবল উপরোক্ত ফজীলতের অধিকারী হওয়া যাবে। আর বিশেষ করে সারা জীবনের গুনাহ থেকে তওবা করে এ রাতে আত্মশুদ্ধির প্রত্যয় গ্রহণ করা এবং সেই অনুযায়ী সারাজিবন চলা আমাদের কর্তব্য।
আল্লাহ তাআলা আমাদেরর সকলকে আমল করার তৌফিক দান করুন।



Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button