বিডিআর হত্যাকাণ্ডের ‘আসল রহস্য’ উন্মোচিত হবে, প্রত্যাশা বিএনপির (Latest Update)
জুমবাংলা ডেস্ক : বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য অবসরপ্রাপ্ত মেজর হাফিজ উদ্দিন আহমেদ (বীরবিক্রম) বলেন, তৎকালীন বাংলাদেশ রাইফেলস (বিডিআর) হত্যাকাণ্ডের ঘটনার পুনঃতদন্তে আসল রহস্য উন্মোচিত হবে।
মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ প্রত্যাশার কথা জানান।
মেজর হাফিজ বলেন, ‘বিডিআর হত্যাকাণ্ড একটি হৃদয়বিদারক ঘটনা। বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন ঘটেছে এবং ভবিষ্যতেও সুদূরপ্রসারি কার্যক্রম রয়েছে। এ দেশটিকে একটি পরনির্ভরশীল রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য- যাদের কোনো শক্তিশালী সেনাবাহিনী থাকবে না। এই পুনঃতদন্তে সে রহস্য উন্মোচিত হবে বলে আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।’
‘১৯৭১ সালে আমরা ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের কয়েকজন অফিসার মিলে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী গড়ে তুলেছিলাম। আমাদের সৃষ্ট এই সেনাবাহিনী জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা ধারণ করেছিল।প্রত্যেকটি আন্দোলন-সংগ্রামে জনগণের সাথী হয়ে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটিয়েছিল। কিন্তু সেই সেনাবাহিনীকে ধবংস করার জন্য প্রাথমিক পদক্ষেপ হলো এই বিডিআর হত্যাকাণ্ড। আমরা আশা করব, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার নির্মোহভাবে, নিরপেক্ষভাবে এ ঘটনার তদন্ত করবে এবং বিচারের কাজ দ্রুত শুরু করবে।’
২০০৯ সালের ২৫-২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিলখানায় বিডিআর (বর্তমানে বিজিবি) সদর দপ্তরে নারকীয় হত্যাকাণ্ড ঘটনায় তৎকালীন মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদসহ ৫৭ চৌকস সেনা কর্মকর্তা ও আরও ১৭ পরিবারের নারী ও শিশুসহ বেসামরিক মানুষ নিহত হয়।
হাফিজ বলেন, ‘ওই বিডিআর হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় অনেক নিরীহ ব্যক্তিকে দণ্ডিত করা হয়েছে, অনেক দোষী ব্যক্তি শাস্তির আওতার বাইরে চলে গিয়েছে। তবু আমরা অন্তর্বর্তী সরকারকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি তারা বিএনপির অনুরোধে এ ধরনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার রহস্য উন্মোচনের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করেছে এবং এটি বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ পথপরিক্রমার জন্য অত্যন্ত জরুরি।’
‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা করার জন্য যে সব দেশ এবং প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক দল প্রতিবেশী রাষ্ট্রের দালাল হিসেবে অপকর্মে লিপ্ত ছিল তাদের সবার চেহারা উন্মোচিত হোক জনগণের স্বার্থে। আমরা একটা নতুন যাত্রা শুরু করতে চাই। আমাদের দল থেকে ইতোমধ্যে বলা হয়েছে- অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারকে সর্বধরনের সাহায্য-সহযোগিতা করব।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আশা করি, অতিঅল্প সময়ের মধ্যে এই নারকীয় বিডিআর হত্যাকাণ্ডের একটা সুষ্ঠু পরিণতি দেখতে চাই, বিচার চাই যাতে করে আমাদের ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর অন্তর শান্ত হয়। আমরা দেখতে চাই, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার যেভাবে পুনঃতদন্ত ও পুনঃবিচারের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে এটি যাতে সঠিকভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে। আমরা বিএনপির তরফ থেকে তাদের সর্বত্রভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করব এবং পরে যেসব ঘটনার বিবরণ বা যেসব ব্যক্তি যারা অত্যন্ত ভাইটাল উইটনেস ছিলেন এ ঘটনায় তারা কেউ বিদেশে চলে গেছেন, কেউ মৃত্যুবরণ করেছেন।’
সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা বলেন, ‘ আমরা আমাদের দলের পক্ষ থেকে এবং সাধারণ নাগরিকরাও বর্তমান সামরিক বাহিনীর কর্মকাণ্ড ক্লোজড মনিটরিং করছি। এখন পর্যন্ত যেসব কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়েছে বিশেষ করে শেখ হাসিনাকে শেষ মুহূর্তে দ্রুত সরকার থেকে বাইরে নিক্ষেপ করার জন্য এবং ছাত্র-জনতার বিপ্লবে পূর্ণাঙ্গ সহায়তা করার জন্য বাংলাদেশের সেনাবাহিনী প্রধান, সেনাসদস্য এবং সামরিক বাহিনীর সব সদস্যকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’
পুনঃতদন্তের কোনো সময়সীমা বিএনপি দেবে কিনা প্রশ্ন করা হলে হাফিজ উদ্দিন বলেন, ‘এই তদন্ত কমিটিকে প্রয়োজনীয় সময় দিতে চাই। আশা করি দ্রুত তারা তদন্ত কাজ এবং বিচারের কাজ সম্পন্ন করবে। সময়সীমা বেঁধে দেওয়া অত্যন্ত মুশকিল।’
বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনা এখনো ধোঁয়াশায় উল্লেখ করে হাফিজ বলেন, ‘এ ঘটনায় সরকারের এবং বিদেশি শক্তির সংশ্লিষ্টতা ছিল কিনা এ সম্পর্কে সব কিছু এখনো ধোঁয়াশাই রয়ে গেছে। এই সম্পর্কে আমরা ২৮ আগস্ট প্রধান উপদেষ্টার কাছে একটি পত্র হস্তান্তর করি। সেখানে অনুরোধ করা হয় যে, এই নারকীয় হত্যাকাণ্ডের নতুনভাবে তদন্ত করে পুনঃবিচার করতে হবে। এর সঙ্গে কারা কারা সংশ্লিষ্ট- বিদেশি হস্তক্ষেপ আছে কিনা? কি কারণে এই নারকীয় হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছিল এ ব্যাপারে কমিশন গঠনের জন্য আমাদের দলের মহাসচিবের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করে একটি চিঠি হস্তান্তর করে।’
‘আমরা খুব আনন্দিত যে, অতিঅল্প সময়ের মধ্যে প্রধান উপদেষ্টার সম্মতি নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এই নারকীয় হত্যাকাণ্ডের পুনঃতদন্ত ও পুনঃবিচারের কাজ শুরু করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। সেজন্য বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘সেনাবাহিনীর মেধাবী ৫৭ কর্মকর্তা ও বেসামরিক ১৭ লোককে হত্যা করা হয়। পিলখানার অভ্যন্তর থেকে ৩৮ সেনা কর্মকর্তার লাশ উদ্ধার করা হয়। নির্মোহ ও উন্মুক্ত তদন্ত হলে এ সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে।’
‘এই পিলখানা ঘটনার প্রধান কারণ কি ছিল? সেনাবাহিনীর মেরুদণ্ড ভেঙে দেওয়ার জন্য বাংলাদেশকে একটি ব্যর্থ, অকার্য্কর, নতজানু রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্যই এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করা হয়েছিল। এতে জড়িত বিদেশি শক্তির অংশ হিসেবে বেশ কিছু ব্যক্তি সুপরিকল্পিতভাবে ফ্যাসিস্ট হাসিনার মদদে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে বলে জনগণের বিশ্বাস রয়েছে। এই হত্যাকাণ্ডে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়াও সেনা প্রধান মঈন উ আহমেদ, শেখ ফজলে নূর তাপস, নুর-ই আলম চৌধুরী লিটন, শেখ সেলিম, শেখ হেলাল, জাহাঙ্গীর কবির নানক, মির্জা আজম, হাসানুল হক ইনু, সাহারা খাতুনসহ আরও অনেক আওয়ামী লীগ নেতা এবং শেখ হাসিনার ঘনিষ্ট আত্মীয়রা জড়িত ছিলেন বলে জনগণের ধারণা রয়েছে।’
বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় সেনাবাহিনীর তরফ থেকে তৎকালীন কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল বর্তমানে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লে. জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন ‘আলোর মুখ’ দেখেনি বলেও মন্তব্য করেন হাফিজ।
তদন্ত কমিটি গঠন প্রসঙ্গে হাফিজ বলেন, ‘ বিডিআর হত্যাকাণ্ডের ঘটনার বিষয়ে আমরা একটা চিঠি সরকারকে দিয়েছিলাম। সেই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পুনঃতদন্তের উদ্যোগ নিয়েছে। আমরা সন্তষ্ট যে, তারা দ্রুত এ ব্যাপারে অগ্রসর হয়েছেন।’
‘আমরা আমাদের চিঠিতে একটি তদন্ত কমিশন স্থাপনের করার জন্য অনুরোধ করেছিলাম। একটা কমিশন যদি তারা করে এবং বিশেষ ট্রাইব্যুনালে বিচার করে তাহলে দ্রুত এ সমস্যার সমাধান হবে বলে আমরা আশা করি।’
স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা তদন্ত কমিশনের জন্য অনুরোধ করেছিলাম। যদি সরকার মনে করে যে, এখন যে পুনঃতদন্ত ও পুনঃবিচারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তার পাশাপাশি যদি সরকার মনে করে যে একটা কমিশন গঠন করবে- সে কমিশনে অনেকের অনেক কিছু বলার থাকবে, যেটা আগে বলতে পারেনি।’
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ইসমাইল জবিহউল্লাহ এবং অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম শামসুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।