World wide News

দুর্গম পাহাড়ে গড়ে ওঠা প্রথম নারী চিকিৎসক সংচাং ম্রো (Latest Update)


জুমবাংলা ডেস্ক : একটা সময় ম্রো সম্প্রদায়কে বলা হতো ‘সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া’ জনগোষ্ঠী। সময়ের পরিক্রমায় ধীরে ধীরে সে তকমা খুলে এগিয়ে চলেছে এই আদিবাসী গোষ্ঠী। দুর্গম পাহাড়ের প্রান্তিক এই সম্প্রদায় থেকে উঠে এল তাদের প্রথম চিকিৎসক সংচাং ম্রো।

শুরুর পথটা যে খুব সহজ ছিল না, সেটা না বললেও বোঝা যায়। স্ত্রী তুমলেং ম্রোর দীর্ঘ অসুস্থতা এবং চিকিৎসার অভাবে এক মেয়ের মারা যাওয়ার ঘটনা মনে বেশ দাগ কাটে সংচাংয়ের বাবা কাইংপ্রে ম্রোর মনে। পারিবারিক এসব ঘটনা থেকে তিনি মনস্থির করেন, সন্তানদের মধ্যে একজনকে চিকিৎসক বানাবেন। সংচাং বাবার সে স্বপ্নকে লালন করেন নিজের মধ্যে। বাবার দীর্ঘ প্রচেষ্টা আর তাঁর কঠিন অধ্যবসায়ে সে স্বপ্ন অবশেষে সফল হয়। তিনি রাঙামাটি মেডিকেল কলেজে ১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হন। আর এখন পড়াশোনা শেষ করে তিনি সে মেডিকেল কলেজে ইন্টার্ন করছেন।

ডা. সংচাং ম্রোর বাড়ি বান্দরবানের আলীকদম উপজেলার সদর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের পাইয়া কার্বারি পাড়ায়।

শৈশবে বাবার কাছেই সংচাংয়ের প্রাথমিক পর্যায়ের পড়াশোনা শুরু হয়। সন্তানদের লেখাপড়া শেখানোর জন্য সংচাংয়ের বাবা কাইংপ্রে নিজেই পড়াশোনা শিখতে শুরু করেছিলেন। জুমের কাজের ফাঁকে তিনি কিশোরী কন্যাকে কখনো মাটিতে আবার কখনো কলাপাতায় এঁকে বর্ণ শিখিয়েছেন। কিন্তু গ্রামে স্কুল না থাকায় পড়তে হয় সমস্যায়। সে জন্য কাইংপ্রে গ্রাম থেকে অনেকটা দূরে লামা মিশন নামে একটি হোস্টেলে ভর্তি করিয়ে দেন মেয়ে সংচাংকে।

এক বছর থাকার পর সে হোস্টেল বন্ধ হয়ে গেলে ফাদার লুপি পরিচালিত তৈদাং হোস্টেলে চলে যেতে হয় তাঁকে। সে হোস্টেলে থাকা অবস্থায় সংচাং চম্পটপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং আলীকদম সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে পড়াশোনা শেষ করেন ২০১২ সালে। এখানে পড়ার সময় তিনি পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পান।

আলীকদমে বিজ্ঞান বিষয়ে ভালো শিক্ষক না থাকায় সংচাংকে ভর্তি হতে হয় সেন্ট যোসেফ হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজে। অভাব-অনটনের মধ্যেও অনেক শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং সিস্টার তাঁকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছেন। এসএসসি পরীক্ষার পর সংচাং হলিক্রস কলেজে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে নির্বাচিত হন। কিন্তু অর্থাভাবে তিনি সেখানে ভর্তি হতে পারেননি। পরে নমিতা নামে এক সিস্টার তাঁকে বিনা ব্যয়ে পড়াশোনার সুযোগ করে দেন। কলেজের অনেক শিক্ষক সংচাংকে পড়িয়েছেন কোনো টাকা ছাড়াই। সিস্টার মেরি মার্গারেট তাঁর হাতখরচ অর্থ দিতেন।

এইচএসসি পরীক্ষা শেষে হাতে কোনো অর্থ না থাকায় সংচাং বাড়ি যেতে পারেননি। কলেজে থাকা অবস্থায় একটি পরিবারের দুই ভাইবোনকে পড়িয়েছেন। সেই জমানো টাকা দিয়ে মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে থাকেন তিনি। অভাব-অনটনের কারণে তাঁর বাবা কাইংপ্রে একবার তাঁকে এলাকায় গিয়ে একটি চাকরির পরীক্ষা দিতে বলেছিলেন। কিন্তু চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্নে বিভোর সংচাং বাবাকে জানান, যতক্ষণ কোথাও তাঁর ভর্তির সুযোগ না মিলছে, তিনি বাসায় ফিরবেন না।

বিশ্ববিদ্যালয় বা মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষা দেওয়া ছিল সংচাংয়ের জীবনের কঠিন সময়। ঢাকায় থাকলেও হোস্টেলে বন্দি–জীবন কেটেছে তাঁর। ফলে ঢাকার কিছুই চিনতেন না। তাঁর সহপাঠীদের বাবা-মায়েরা এসে তাঁদের হলে পৌঁছে দিচ্ছেন। আর এই প্রায় অপরিচিত শহরে সংচাং একা একা ভর্তি পরীক্ষা দিতে যেতেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বা মেডিকেল কলেজে।

সংচাংয়ের জীবনে সবচেয়ে খুশির দিন কোনটি? জিজ্ঞেস করেছিলাম। তিনি ঝটপট উত্তর দিয়েছিলেন, ‘যেদিন রাঙামাটি মেডিকেল কলেজের রেজাল্ট পেয়েছি। এর পরের দিনই আমি বাসায় যাওয়ার প্রস্তুতি নিই এবং প্রায় ৩ বছর পর আমি বাসায় যাই।’

মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়ার পর থেকে সংচাংকে আর টাকার জন্য পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা, সুবর্ণা ভূমি ফাউন্ডেশন এবং বিএসএসবি তাঁকে বিভিন্নভাবে সহায়তা করে। জ্যেষ্ঠ শিক্ষার্থীরাও তাঁকে বই-খাতাসহ বিভিন্ন শিক্ষা সরঞ্জাম দিয়ে সহায়তা করেন।

‘আমি চাই পাহাড়ের মানুষ যেন চিকিৎসার অভাবে আর মারা না যায়। পাহাড়ে এখনো সুচিকিৎসার যথেষ্ট অভাব।’ নিজের পরিবার আর পুরো জনপদের দিকে তাকিয়ে আমাকে বলেন ডা. সংচাং। তিনি জানান, বন্ধুর পাহাড়ের এক প্রান্তবাসী জনগোষ্ঠী তাকিয়ে আছে তাঁর দিকে। এ কথাই একটু অন্যভাবে জানালেন আলীকদম-নাইক্ষ্যংছড়ি ম্রো কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক থং প্রে ম্রো। তিনি বলেন, সংচাং ম্রোদের মধ্যে প্রথম নারী ডাক্তার। তাঁর এই কৃতিত্ব ম্রোদের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ।

ফাইভজি ফোন কেনার আগে ৫টি বিষয় অবশ্যই দেখে নিবেন

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button