বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ঢাকা কলেজের ৩৯ শিক্ষার্থী আহত, নিহত ১ (গুরুত্বপূর্ণ খবর)
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সারা দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজের ন্যায় স্বৈরাচার কর্তৃক পৈশাচিক হামলায় ঢাকা কলেজের ৩৯ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছে এবং নিহত হয়েছে ১ জন শিক্ষার্থী। নিহত শিক্ষার্থীর নাম সবুজ আলী। ঢাকা কলেজের পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের শির্ক্ষাথী ছিলো সবুজ আলী। তিনি ঢাকা কলেজ উত্তর ছাত্রাবাসের ২০৫ নং কক্ষে থাকতেন।
বেসরকারি বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার সূত্রমতে গত ১ জুলাই থেকে ৫ আগষ্ট পর্যন্ত ৩৬ দিনে ৭৫৭ জনের মৃত্যু এবং প্রায় পাঁচ হাজারের কাছাকাছি মানুষ আহত হয়েছে বলে জানা যায়।
গত ৩ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে কোটা সংস্কারের দাবিতে ঢাকা কলেজ ক্যাম্পাসের বিক্ষোভ মিছিল করে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এর ধারাবাহিকতায় ১৫ জুলাই ছাত্রলীগ ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি ঘোষণা করে। এ কর্মসূচিতে রাজু ভাস্কর্য থেকে ভিসি চত্ত্বর অভিমুখে শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে গেলে ছাত্রলীগের হামলায় আহত হন ৫০ জন শিক্ষার্থী।
এর মধ্যে ঢাকা কলেজের সম্বন্বয়ক নাজমুল হাসান মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে চার দিন ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। একইদিনে ঢাকা কলেজ ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান মাথা, কান, দাঁত, মুখে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে প্রথমে ঢাকা মেডিকেলে পরবর্তীতে উন্নত চিকিৎসার জন্য নিউরোসাইন্স হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা করা হয়েছিল। এছাড়াও একইদিনে ছাত্রলীগের হামলায় মৃদু আহত হয় ইসলামের স্টাডিজ বিভাগের আমানুল্লাহ আমান।
১৬ জুলাই সাইন্সল্যাবে উচ্চমাধ্যমিকের ৫ কলেজ সহ ঢাকা কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর ছাত্রলীগের অতর্কিত হামলায় ছয় জন ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী আহত হন। আহত শিক্ষার্থীরা হল রাকিব, সাজিদ, মাহাদী, মুশফিক, নাঈম ও নিলয়।এর মধ্যে ছাত্রলীগ- যুবলীগের হামলায় সাজিদ হাসানের মাথার বিভিন্ন অংশ জখম হলে পপুলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়।
এদিন হত্যার শিকার হয় ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী সবুজ আলী। সাইন্সল্যাবে ছাত্রলীগ ও উচ্চমাধ্যমিকের কোটা সংষ্কার আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের সাথে সংঘর্ষ চলাকালে বিকেলে সবুজের মাথায় গুরুতর আঘাত লাগে। আহত অবস্থায় তার সহপাঠীরা তাৎক্ষণিক ভ্যানে করে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। এরপর চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ১২টা ৩০ মিনিটের দিকে সবুজ মৃত্যুবরণ করেন।
১৮ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কমপ্লিট শার্টডাউন কর্মসূচিতে সাইন্সল্যাবে পুলিশ-ছাত্রলীগের হামলায় মেরুদণ্ডের হাড় ভেঙ্গে যায় ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থী আহমেদ জীবনের। এদিন আহত হয় আব্দুর রহমান ডালিম, জুবায়ের শেখ, শিহাব আল হাবিল সহ আরও অনেকে। ১৯ জুলাই সাইন্সল্যাবে পুলিশ কর্তৃক হেলিকপ্টার থেকে ছোড়া টিয়ারশেলে গুরুতর আহত তৌয়্যেব হাসান তাহসিন পপুলার মেডিকেলে ভর্তি করা হয়।
২৬ জুলাই ঢাকা কলেজের একাদশ শ্রেণির প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী হাসনাতুল ইসলাম ফাইয়াজকে পুলিশ গ্রেফতার করে নির্যাতন চালায়। পরবর্তীতে আদালত তাকে সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। এতে মানসিক ও শারীরিকভাবে আহত হন ফাইয়াজ। ২৯ জুলাই রাজধানীর বাটা সিগনাল মোড় থেকে আন্দোলনে সম্পৃক্ততার অভিযোগে তাওহীদুল ইসলামসহ ছয় জনকে গ্রেফতার করে নিউমার্কেট থানার অকথ্য নির্যাতন করে পুলিশ। পরে আদালত তাদের চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে।
১ থেকে ৪ আগষ্ট ইমরান হোসাইন, নাহিদুজ্জামান জুয়েল, নাহিদ হাসান ও স্বাধীন পুলিশ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের গুলিতে মাথা, চোখ, শরীরে, পায়ে তীব্রভাবে জখম ও গুলিবিদ্ধ হন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পঙ্গুত্ববরণকারী ঢাকা কলেজের অনার্স চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল ইমরান গণমাধ্যমকে বলেন, আমার বাবা একজন বর্গাচাষী। আমি টিউশনি করে ঢাকায় পড়াশোনা করতাম। আমার এ পর্যন্ত ছয় বার অপারেশন হয়েছে। চিকিৎসায় দুই লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। আমার কিছুদিন পরে পড়াশোনা শেষ হয়ে যেত। এখন আমার পা থাকবে কি থাকবে না জানিনা।
উল্লেখ্য, এছাড়াও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ঢাকা কলেজের যেসব শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন শাফিকুল ব্যাপারী, সুমন মিয়া, সাকিল মাহমুদ, জুলফিকার আলী, সালমান শরীফ, বাদশা হোসেন, তাসনিমুল হাসান সাঈদী, জাহাঙ্গীর আলম, জুবায়েদ ফারাজ, মায়ান হাসান, গোলাম রব্বানী, ইফাদ আহমেদ অর্ক, আহসান হাবীব, মমিন উল্লাহ, দিপ মাহবুব, মো: ইমরান হোসেন, রকিব, আজাহার এবং ফজলুল হক ফরহাদ।