আবাসন খরচ নিয়ে ধনী দেশগুলোয় বাড়তি উদ্বেগ (Latest Update)
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ধনী দেশগুলোয় আবাসন খরচ নিয়ে অসন্তোষ আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে উচ্চতায় পৌঁছেছে। এসব দেশের মানুষ স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষার মতো খাতের চেয়ে আবাসন নিয়ে বেশি উদ্বেগে আছে বলে গ্যালাপ অ্যানালিটিকসের সাম্প্রতিক এক জরিপে উঠে এসেছে। অর্গানাইজেশন অব ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টে (ওইসিডি) অন্তর্ভুক্ত দেশগুলোয় এ জরিপ পরিচালিত হয়। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের অর্ধেকই জানিয়েছেন, সাশ্রয়ী মূল্যের আবাসনের সংকট নিয়ে তারা অসন্তুষ্ট। খবর এফটি।
কভিড-১৯ পরবর্তী সময়ে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়াকে অনেকটাই শ্লথ করে দিয়েছে উচ্চ সুদহার ও মূল্যস্ফীতি। মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরতে অনেক দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদহার দুই দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ উচ্চতায় নিয়ে গেছে। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সুদহার সংক্রান্ত উদ্বেগ বিশ্বের আর্থিক খাতে প্রভাবক হিসেবে কাজ করছে। আর এ পরিস্থিতি আবাসন খাতেও প্রভাব ফেলেছে।
প্রতিবেদন অনুসারে, ইউরোপের কয়েকটি দেশে সম্পত্তির দাম কমিয়ে আনতে সাহায্য করেছে উচ্চ সুদহার। তা সত্ত্বেও মহামারীর আগের তুলনায় এখনো সেখানে আবাসন ব্যয়বহুল। এমনকি ঋণ বাদ দিয়ে হিসাব করলেও খরচ বেশি পড়ে। রেকর্ড সুদহারের মাঝে বাড়ির দাম সবচেয়ে বেড়েছে বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি যুক্তরাষ্ট্রে। দেশটি থেকে জরিপে অংশ নেয়াদের প্রায় ৬০ শতাংশ বলেছে, তারা সাশ্রয়ী মূল্যের আবাসন না পেয়ে অসন্তুষ্ট। দেশটিতে এমন এক সময় আবাসন নিয়ে চিন্তা বাড়ছে যখন খাদ্য ও জ্বালানির মতো প্রয়োজনীয় পণ্যের উচ্চ মূল্য নিষ্পত্তিযোগ্য আয়ের বেশির ভাগ কেটে নিচ্ছে।
এ সংকটের জন্য আংশিকভাবে নতুন বাড়ি নির্মাণ কম হওয়াকে দায়ী করেছেন গবেষকরা। ওইসিডির সামাজিক নীতি বিভাগের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ উইলেম অ্যাডেমা বলেন, ‘ডেভেলপাররা প্রায়ই ধনী পরিবারগুলোকে লক্ষ্য করে বাড়ি নির্মাণ করে থাকে, যা নিম্ন আয়ের ব্যক্তিদের ওপর চাপ বাড়িয়ে দিচ্ছে। যথেষ্ট আবাসনের সরবরাহ এ সমস্যার সমাধান করতে পারে।’
গবেষণা সংস্থা ক্যাপিটাল ইকোনমিকসের বিশ্লেষক অ্যান্ড্রু উইশার্টের মতে, নতুন বাড়ির সরবরাহের সঙ্গে জনবিন্যাসের খাপ খাইয়ে নেয়া কঠিন। তিনি বলেন, ‘যে হারে আবাসন সরবরাহ বাড়ছে, এর তুলনায় চাহিদা বৃদ্ধির প্রবণতা অনেক বেশি এগিয়ে থাকতে পারে।’
আগামী নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। আবাসন নিয়ে অসন্তোষ নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। বাড়ির মূল্যবিষয়ক কেস-শিলার সূচক অনুসারে, ২০২১ সালের জানুয়ারিতে জো বাইডেন যখন হোয়াইট হাউজে দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন, ওই সময়ের তুলনায় বর্তমানে বাড়ির গড় মূল্য প্রায় ৩৮ শতাংশ বেশি।
হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির জয়েন্ট সেন্টার ফর হাউজিং স্টাডিজের গবেষণায় দেখা গেছে, কম ডিপোজিট লোন নেয়া হয়েছে—এমন মাঝারি মূল্যের বাড়িতে মাসিক হাউজিং পেমেন্ট বর্তমানে ৩ হাজার ৯৬ ডলার, যা ২০২১ সালের জানুয়ারিতে ছিল ২ হাজার ডলারের মতো। এ ধরনের হাউজিং পেমেন্ট সাধারণত প্রথমবার বাড়ি কিনছেন এমন ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয়।
৩৭টি দেশের ৩৭ হাজারের বেশি ব্যক্তির প্রতিক্রিয়ার ওপর ভিত্তি করে সাম্প্রতিক জরিপটি করেছে গ্যালাপ। সেখানে দেখা যায়, ৩০ বছরের কম বয়সী এবং ৩০-৪৯ বছর বয়সীদের মধ্যে আবাসনের মূল্য নিয়ে অসন্তোষ সবচেয়ে বেশি। পঞ্চাশোর্ধ্ব বয়সীদের মধ্যে ৪৪ শতাংশ অংশগ্রহণকারী আবাসন নিয়ে অসন্তুষ্ট। তবে এ অনুপাত ৩০ বছরের কম বয়সীদের ক্ষেত্রে ৫৫ এবং ৩০-৪৯ বছর বয়সীদের ক্ষেত্রে ৫৬ শতাংশ।
সরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে, ইংল্যান্ডে একটি বাড়ির দাম এখন গড় বার্ষিক মজুরির আট গুণ, যা ১৯৯৭ সালে লেবার পার্টির শেষবার ক্ষমতা গ্রহণের সময়কালের দামের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি। বর্তমানে ইংল্যান্ডে অস্থায়ী আবাসনে থাকা পরিবারের সংখ্যাও রেকর্ড উচ্চতায় রয়েছে।
জরিপে দেখা যাচ্ছে, ধনী দেশগুলোর জনসংখ্যার প্রায় ৩০ শতাংশ স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও গণপরিবহন নিয়ে অসন্তুষ্ট। ২০২৩ সালের তুলনায় জীবনযাত্রার মান নিয়ে অসন্তুষ্টি কিছুটা বেড়েছে। এর আগে ২৪ শতাংশ অসন্তুষ্টি জানালেও এবার তা বেড়ে হয়েছে ২৫ শতাংশ।
গ্যালাপের মূল প্রতিবেদন হলো ওয়ার্ল্ড পোল। জরিপটি বার্ষিক হিসেবে সংকলিত হয়। ২০২৩ সালে ১৪২টি দেশের ১ লাখ ৪৫ হাজার ৭০২ জনের মতামত নেয়া হয়েছিল। জনসংখ্যার অনুপাতের ভিত্তিতে এ জরিপের ফলাফল তৈরি করা হয়। চলতি বছরের কিছু তথ্য এরই মধ্যে প্রকাশ হয়েছে। সেখানে দেখা যায়, এ বছর আবাসন নিয়ে অসন্তোষ আরো বেড়েছে।
জার্মানিতে সাশ্রয়ী মূল্যের আবাসনের প্রাপ্যতা নিয়ে অসন্তুষ্ট ব্যক্তির হার ৪৬ শতাংশের নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে, যা ২০২৩ সালে ছিল ৪২ শতাংশ। ২০১২ তুলনায় অসন্তুষ্টি বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। স্পেনেও আবাসন নিয়ে অসন্তুষ্টির পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। সেখানে জরিপে অংশ নেয়া ৬২ শতাংশ আবাসন সংকট নিয়ে হতাশার কথা জানিয়েছে, যা সাম্প্রতিক আর্থিক সংকটের পর সর্বোচ্চ।