মহানবী (সাঃ) এর জীবনী

বনু কুরায়যার যুদ্ধ

বনু কুরায়যার যুদ্ধ
(৫ হিজরীর যুলক্বা‘দাহ ও যুলহিজ্জাহ ৬২৬ খৃষ্টাব্দের মার্চ ও এপ্রিল মাস)
মদীনায় অবস্থিত তিনটি ইহুদী গোত্রের সর্বশেষ গোত্রটি ছিল বনু কুরায়যা। এদের সঙ্গে রাসূলের চুক্তি ছিল যে, তারা বহিঃশত্রুর আষমণ কালে সর্বদা রাসূলকে সাহায্য করবে। গোত্রনেতা কা‘ব বিন আসাদ কোরাযী নিজে উক্ত চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। তাদের বাসস্থান ছিল মুসলিম আবাসিক এলাকার পিছনে। মাসব্যাপী খন্দক যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে তারা মুসলিম বাহিনীকে কোনরূপ সাহায্য করেনি। মুনাফিকদের ন্যায় তারাও যুদ্ধের গতি-প্রকৃতি পর্যবেক্ষণ করছিল।
ইতিমধ্যে বিতাড়িত বনু নাযীর ইহুদী গোত্রের নেতা হুয়াই বিন আখত্বাব খায়বর থেকে অতি সঙ্গোপনে বনু কুরায়যার দুর্গে আগমন করে এবং তাদেরকে নানাভাবে মুসলিম বাহিনীর বিরুদ্ধে ফুসলাতে থাকে। সে তাদেরকে বুঝায় যে, কুরাইশের নেতৃত্বে সমস্ত আরবের দুর্ধর্ষ সেনাদল সাগরের জোয়ারের মত মদীনার উপকণ্ঠে সমবেত হয়েছে। তারা সবাই এই মর্মে আমার সাথে ওয়াদাবদ্ধ হয়েছে যে, ‘মুহাম্মাদ ও তাঁর সাথীদের উৎখাত না করা পর্যন্ত তারা ফিরে যাবে না’। [1]
কা‘ব বিন আসাদ দুর্গের দরজা বন্ধ করে দেন ও বারবার তাকে ফিরে যেতে বলেন এবং মুহাম্মাদের সঙ্গে চুক্তি ভঙ্গ করবেন না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দেন। কিন্তু ধুরন্ধর হুয়াইয়ের অব্যাহত চাপ ও তোষামুদীতে অবশেষে তিনি কাবু হয়ে পড়েন। তখন একটি শর্তে তিনি রাযী হন যে, যদি কুরায়েশ ও গাত্বফানীরা ফিরে যায় এবং মুহাম্মাদকে কাবু করতে না পারে, তাহলে হুয়াই তাদের সঙ্গে তাদের দুর্গে থেকে যাবেন।
হুয়াই এ শর্ত মেনে নেয় এবং বনু কুরায়যা চুক্তিভঙ্গের সিদ্ধান্ত নেয়। এখবর রাসূলের কর্ণগোচর হলে তিনি আউস ও খাযরাজ গোত্রের দু’নেতা সা‘দ বিন মু‘আয ও সা‘দ বিন ওবাদাহ এবং আব্দুল্লাহ বিন রাওয়াহা ও খাউয়াত বিন জুবায়েরকে পাঠান সঠিক তথ্য অনুসন্ধানের জন্য। তিনি তাদেরকে বলে দেন যে, চুক্তিভঙ্গের খবর সঠিক হলে তারা যেন তাকে এসে ইঙ্গিতে জানিয়ে দেয় এবং অন্যের নিকটে প্রকাশ না করে। তারা সন্ধান নিয়ে এসে রাসূলকে বল্লেন, অর্থাৎ রাজী‘-এর আযল ও ক্বারাহর ন্যায় বিশ্বাসঘাতকতার ঘটনা ঘটেছে’।
গোপনীয়তা রক্ষা করা সত্ত্বেও প্রকৃত পরিস্থিতি সবার নিকটে স্পষ্ট হয়ে গেল।
(১) বনু কুরায়যার জনৈক ইহুদী গুপ্তচর মুসলিম নারী ও শিশুদের এলাকায় ঘুরঘুর করতে থাকে। রাসূলের ফুফু ছাফিয়া বিনতে আব্দুল মুত্ত্বালিব তাকে ধরে কাঠের চলা দিয়ে পিটিয়ে মেরে ফেলেন।
(২) ওদিকে মুনাফিকেরা বলতে লাগল যে, মুহাম্মাদ আমাদেরকে ওয়াদা দিয়েছিলেন যে, আমরা কায়ছার ও কিসরার ধন-সম্পদ ভোগ করব। অথচ এখন অবস্থা এই যে, পেশাব-পায়খানার জন্য বের হলেও জীবনের ভয় রয়েছে। কোন কোন মুনাফিক বলল, আমাদের বাড়ীঘর শত্রুদের সামনে খোলা পড়ে রয়েছে সুতরাং আমাদের ঘরবাড়িতে ফিরে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হৌক। এমনকি খাযরাজ গোত্রের বনু সালামার মুসলমানদের মন ভেঙ্গে গেল ও তাদের মধ্যে যুদ্ধ হতে ফিরে যাবার চিন্তা শুরু হয়ে গেল।
(৩) ইতিমধ্যে মুসলিম বাহিনীর হাতে বনু কুরায়যার ২০টি উট বোঝাই রসদ সম্ভার আটক হয়। যা অবরোধকারী শত্রু বাহিনীর সাহায্যার্থে প্রেরিত হয়েছিল। এ সময় রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এক নাযুক অবস্থার সম্মুখীন হন। কেননা পিছন দিকে বিশ্বাসঘাতক বনু কুরায়যার হামলা মুকাবিলা করার মত উপযুক্ত কোন ব্যবস্থাই মুসলমানদের হাতে ছিল না। সম্মুখভাগে বিশাল শত্রু বাহিনী রেখে পিছিয়ে আসাও সম্ভব ছিল না।
মুসনাদে আব্দুর রাযযাকে ক্বাতাদাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে যে, খন্দকের দিন নবী করীম (সাঃ) ও মুমিনদের এই কঠিন সংকট বিষয়ে আল্লাহর পক্ষ হতে নিম্নোক্ত আয়াতটি নাযিল হয়।
‘তোমরা কি ভেবেছ যে জান্নাতে প্রবেশ করবে, অথচ তোমাদের উপরে এখনো তেমন অবস্থা আসেনি, যা তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপরে এসেছিল। তাদের স্পর্শ করেছিল বিপদ ও কষ্ট সমূহ এবং তারা ভীত-শিহরিত হয়েছিল। এমনকি তাদের রাসূল ও তাঁর সাথী ঈমানদারগণ বলতে বাধ্য হয়েছিল যে, আল্লাহর সাহায্য কখন আসবে? শুনে নাও! আল্লাহর সাহায্য অতীব নিকটবর্তী’ (বাক্বারাহ ২/২১৪)।
এ অবস্থায় আল্লাহর রাসূল (সাঃ) মুখমন্ডল আবৃত করে দীর্ঘ সময় চিৎ হয়ে শুয়ে থাকেন। তারপর ‘আল্লাহু আকবর’ বলে উঠে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘হে মুসলিমগণ! আল্লাহর পক্ষ হতে বিজয় ও সাহায্যের সুসংবাদ গ্রহণ কর’। অতঃপর তিনি দু’টি পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।
এক. কিছু সৈন্যকে মদীনার নিরাপত্তা বিধানের জন্য পাঠিয়ে দেন।
দুই. শত্রু সেনাদলের মধ্যে ফাটল সৃষ্টি করে তাদের একে অপর থেকে পৃথক করে ফেলা। সে লক্ষ্যে তিনি বনু গাত্বফানের দুই নেতা ওয়ায়না বিন হিছন ও হারেছ বিন ‘আওফের সঙ্গে সন্ধির চিন্তা করেন মদীনার উৎপন্ন ফসলের এক-তৃতীয়াংশ দেবার শর্তে। যাতে ওরা ওদের সেনাদল নিয়ে ফিরে যায়। অতঃপর তিনি উক্ত বিষয়ে দুই সা‘দের মতামত জানতে চাইলেন।
তারা বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! যদি আল্লাহ এ বিষয়ে আপনাকে নির্দেশ দিয়ে থাকেন, তবে তথাস্ত্ত। কিন্তু যদি আপনি এটা আমাদের হিতার্থে করতে চান, তবে এতে আমাদের কোন প্রয়োজন নেই’। তারা বলেন, যখন আমরা এবং এসব লোকেরা শিরক ও মূর্তিপূজার মধ্যে ছিলাম, তখন তারা আমাদের একটি শস্যদানারও লোভ করার সাহস করেনি।
আর এখন তো আল্লাহ আমাদেরকে ইসলামের দ্বারা সম্মানিত করেছেন এবং আমাদেরকে হেদায়াত দান করেছেন ও আপনার মাধ্যমে ইয্যত প্রদান করেছেন, এখন কেন আমরা তাদেরকে আমাদের ধন-সম্পদ প্রদান করব’? তখন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাদের মতামতকে সঠিক গণ্য করেন ও বলেন, ‘সমগ্র আরব তোমাদের বিরুদ্ধে একই সাথে অস্ত্রধারণ করেছে দেখে শুধু তোমাদের খাতিরেই আমি এরূপ করতে চেয়েছিলাম’।
অতঃপর আল্লাহর পক্ষ থেকেই সুন্দর এক ব্যবস্থা নেমে এল, যাতে বিশ্বাসঘাতক বনু কুরায়যা ও আষমণকারী কুরায়েশ বাহিনীর মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি হয়ে গেল এবং উভয় দলের মনোবল ভেঙ্গে গেল। ঘটনা ছিল এই যে, শত্রু পক্ষের বনু গাত্বফান গোত্রের নু‘আইম ইবনু মাসঊদ ইবনু আমের আশজাঈ নামক জনৈক ব্যক্তি রাসূলের খিদমতে এসে বলল, হে রাসূল! আমি ইসলাম কবুল করেছি। কিন্তু আমার সম্প্রদায় এ খবর জানে না।
এক্ষণে আপনি আমাকে যেকোন নির্দেশ প্রদান করুন। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, ‘আমাদের পক্ষ হতে সাধ্যমত তুমি ওদের মনোবল ভেঙ্গে দাও। কেননা যুদ্ধ হল কুট-কৌশল মাত্র’। নু‘আইমের সঙ্গে বনু কুরায়যার সুসম্পর্ক ছিল। তিনি তাদেরকে যেয়ে বুঝালেন যে, কুরায়েশ ও বনু গাত্বফান হল বহিঃশত্রু। তারা চলে যাবে। কিন্তু মুহাম্মাদ ও মুসলমানেরা হল তোমাদের প্রতিবেশী। এদের সঙ্গেই তোমাদের থাকতে হবে। তোমরা যদি শত্রুদের সঙ্গে হাত মিলাও, তবে আজ হৌক কাল হৌক মুসলমানেরা তোমাদের প্রতিশোধ নেবেই।
একথা শুনে তারা ঘাবড়ে গিয়ে বলল, তাহলে এখন আমাদের করণীয় কি? নু‘আইম বললেন, তোমরা কুরায়েশদের বলে পাঠাও যে, যতক্ষণ না তারা তাদের কিছু লোককে তোমাদের যিম্মায় বন্ধক হিসাবে রাখবে, ততক্ষণ তোমরা তাদের কোনরূপ সহযোগিতা করবে না’। তারা এ প্রস্তাবে খুবই খুশী হল। অতঃপর নু‘আইম কুরায়েশ নেতাদের গিয়ে বলল যে, বনু কুরায়যা মুহাম্মাদের সঙ্গে সন্ধিচুক্তি ভঙ্গের কারণে এখন খুব লজ্জিত। তারা আপনাদের কিছু লোককে বন্ধক হিসাবে নিয়ে মুহাম্মাদের হাতে তুলে দিতে চায়।
অতএব আপনারা যেন তাদের এরূপ কোন প্রস্তাবে সম্মত হবেন না। তারপর বনু গাত্বফানের কাছে গিয়ে নু‘আইম একই কথা বললেন। অতঃপর বিষয়টির সত্যতা যাচাইয়ের জন্য ৫ম হিজরীর শাওয়াল মাসের শুষবার দিবাগত রাতে কুরায়েশ পক্ষ ইহুদী বনু কুরায়যার নিকটে দূত পাঠালো এই মর্মে যে, আমরা খুব অসুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছি। আমাদের উট-ঘোড়া সব শেষ হয়ে যাচ্ছে। এমতাবস্থায় তোমরা ও আমরা দু’দিক থেকে একই সাথে হামলা চালালে মুহাম্মাদকে কাবু করা সম্ভব।
জবাবে তারা বলে পাঠাল, আগামীকাল শনিবার আমাদের পবিত্র দিবস। এদিনে অবাধ্যতার কারণে আমাদের পূর্ব পুরুষকে আল্লাহ শূকর-বানরে পরিণত করেছিলেন। ‘তাছাড়া আপনাদের কিছু লোককে আমাদের নিকটে বন্ধক না রাখা পর্যন্ত আমরা আপনাদের পক্ষে লড়াই করব না’। এখবর দূত মুখে শোনার পর কুরায়েশ ও বনু গাত্বফান বলে উঠল, ‘আল্লাহর কসম! নু‘আইম তোমাদের সঙ্গে সত্য কথা বলেছেন’। তারা যথারীতি বন্ধক রাখতে অস্বীকার করল। ফলে বনু কুরায়যা বলে উঠলো, ‘আল্লাহর কসম! নু‘আইম সত্য কথা বলেছে’। এভাবে উভয় দলের মধ্যে ফাটল ও বিভেদ সৃষ্টি হয়ে গেল।
এরপর আল্লাহর পক্ষ হতে উত্তপ্ত ঘুর্ণিবায়ু নাযিলের ফলে শত্রুপক্ষ শূন্য হাতে জীবন নিয়ে পালিয়ে যায় এবং যুলক্বা‘দাহ মাসের সাত দিন বাকী থাকতে বুধবার পূর্বাহ্নে রাসূল (সাঃ) মদীনায় ফিরে আসেন। [2]
ফিরে এসে উম্মে সালামার ঘরে যোহরের সময় যখন আল্লাহর রাসূল গোসল করছিলেন, এমন সময় জিব্রীল এসে বললেন, আপনি অস্ত্র নামিয়ে ফেলেছেন, অথচ ফেরেশতারা এখনো অস্ত্র নামায়নি। দ্রুত বনু কুরায়যার দিকে অগ্রসর হউন। [3]
তখন রাসূল (সাঃ) ঘোষণা প্রচার করে দিলেন যে, ‘যারা আমার আদেশ শুনতে ও মানতে প্রস্ত্তত আছে, তারা যেন বনু কুরায়যায় পৌঁছনোর আগে আছর না পড়ে’। অতঃপর আব্দুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতূমের উপরে মদীনার দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে ৩০০০ সৈন্য নিয়ে তিনি বনু কুরায়যা অভিমুখে রওয়ানা হলেন। অবশ্য ছাহাবীদের কেউ রাস্তাতেই আছর পড়ে নেন। কেউ পৌঁছে গিয়ে আছর পড়েন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) কাউকে কিছু বলেননি। কেননা এর দ্বারা তাঁর উদ্দেশ্য ছিল সকলের দ্রুত বের হওয়া। অতঃপর যথারীতি বনু কুরায়যার দুর্গ অবরোধ করা হয়, যা ২৫ দিন স্থায়ী হয়।
অবশেষে তারা আত্মসমর্পণ করে এবং তাদের সাবালক ও সক্ষম পুরুষদের বন্দী করা হয় যাদের সংখ্যা ৬০০ থেকে ৭০০ এর মধ্যে ছিল। এদের  সম্পর্কে ফায়ছালার দায়িত্ব তাদের মিত্র আউস গোত্রের দাবী অনুযায়ী আওস নেতা সা‘দ ইবনে মু‘আযকে অর্পণ করা হয়। তিনি তাদের বিশ্বাসঘাতকতার প্রায়শ্চিত্ত স্বরূপ সবাইকে হত্যা করার নির্দেশ দেন। সেমতে হুয়াই বিন আখত্বাব সহ সবাইকে হত্যা করা হয়। [4]
যদি তারা ফায়ছালার দায়িত্ব রাসূলকে দিত, তাহলে হয়ত পূর্বেকার দুই গোত্রের ন্যায় তাদেরও নির্বাসন দন্ড হত। অতঃপর তাদের কয়েদী ও শিশুদের নাজদে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করে দিয়ে তার বিনিময়ে ঘোড়া ও অস্ত্র ক্রয় করা হয়। উল্লেখ্য যে, অবরোধ কালে মুসলিম পক্ষে খাল্লাদ বিন সুওয়ায়েদ শহীদ হন এবং উক্কাশার ভাই আবু সিনান বিন মিহছান স্বাভাবিক মৃত্যুবরণ করেন।
প্রথমে ২য় হিজরীর রামাযান মাসে বনু ক্বায়নুক্বা, অতঃপর ৪র্থ হিজরীর রবীউল আউয়ালে বনু নাযীর এবং সর্বশেষ ৫ম হিজরীর যিলহাজ্জ মাসে তৃতীয় ও সর্বশেষ ইহুদী গোত্র বনু কুরায়যার নির্মূলের ফলে মদীনা ইহুদীমুক্ত হয় এবং মুসলিম শক্তি প্রতিবেশী কুচক্রিদের হাত থেকে রেহাই পায়।
ফুটনোট:
[1] আর-রাহীক্ব, ৩০৯ পৃঃ।
[2] ইবনে হিশাম, বায়হাক্বী, দালায়েলুন নবুঅত ৩/৪৪৫-৪৭, সনদ ‘মুরসাল’।
[3] বুখারী হা/৪১১৭।
[4] বুখারী হা/৪১২১।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button