মহানবী (সাঃ) এর জীবনী
আবু ত্বালিবের ও খাদীজা (রাঃ)এর মৃত্যু (১০ম নববী বর্ষ)
আবু ত্বালিবের ও খাদীজা (রাঃ)এর মৃত্যু (১০ম নববী বর্ষ)
★★★ দীর্ঘ তিন বছর বয়কট অবস্থায় থেকে গাছের ছাল-পাতা খেয়ে অর্ধাহারে-অনাহারে বার্ধক্য জর্জরিত দেহ নিয়ে চাচা আবু ত্বালিব ও স্ত্রী খাদীজাতুল কুবরা চূড়ান্ত অবস্থায় পৌঁছে গিয়েছিলেন।
আবু ত্বালিবের মৃত্যু (রজব ১০ম নববী বর্ষ):
১০ম নববী বর্ষের মুহাররম মাসে ঠিক তিন বছরের মাথায় বয়কট শেষ হওয়ার ৬ মাস পরে রজব মাসে আবু ত্বালিবের মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে আবু জাহল, আব্দুল্লাহ ইবনে আবী উমাইয়া প্রমুখ মুশরিক নেতৃবৃন্দ তাঁর শিয়রে বসে ছিল। এ সময় রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এসে মৃত্যুপথযাত্রী পরম শ্রদ্ধেয় চাচাকে বললেন, ‘হে চাচা! আপনি লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ কলেমাটি পাঠ করুন, যাতে আমি সেটাকে আপনার জন্য প্রমাণ হিসাবে আল্লাহর নিকটে পেশ করতে পারি’।
কিন্তু এ সময় দুরাচার আবু জাহল ও আব্দুল্লাহ বিন আবু উমাইয়া বারবার তাঁকে উত্তেজিত করতে থাকে যেন তিনি পিতৃধর্ম ত্যাগ না করেন। ফলে শেষ বাক্য তাঁর মুখ দিয়ে বেরিয়ে যায়‘আব্দুল মুত্ত্বালিবের দ্বীনের উপরে’। তখন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলে উঠলেন,
‘আমি আপনার জন্য আল্লাহর নিকটে ক্ষমা প্রার্থনা করে যাব। যতক্ষণ না আমাকে নিষেধ করা হয়’। ফলে এ সময় আয়াত নাযিল হয়-
مَا كَانَ لِلنَّبِيِّ وَالَّذِيْنَ آمَنُوْا أَنْ يَّسْتَغْفِرُوْا لِ لْمُشْرِكِيْنَ وَلَوْ كَانُوْا أُوْلِيْ قُرْبَى مِنْ بَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُمْ أَنَّهُمْ أَصْحَابُ الْجَحِيْمِ-
‘নবী ও ঈমানদারগণের জন্য সিদ্ধ নয় যে, তারা ক্ষমাপ্রার্থনা করবে মুশরিকদের জন্য। যদিও তারা নিকটাত্মীয় হয়, একথা স্পষ্ট হয়ে যাওয়ার পর যে তারা জাহান্নামের অধিবাসী’ (তওবাহ ৯/১১৩)।
এরপরে নবীকে সান্ত্বনা দিয়ে আয়াত নাযিল হয়,
إِنَّكَ لاَ تَهْدِيْ مَنْ أَحْبَبْتَ وَلَكِنَّ اللهَ يَهْدِيْ مَنْ يَّشَآءُ وَهُوَ أَعْلَمُ بِالْمُهْتَدِيْنَ-
‘নিশ্চয়ই তুমি হেদায়াত করতে পার না যাকে তুমি পসন্দ কর। বরং আল্লাহ যাকে ইচ্ছা হেদায়াত করে থাকেন এবং তিনি হেদায়াতপ্রাপ্তদের সম্পর্কে অধিক জ্ঞাত’ (ক্বাছাছ ২৮/৫৬)।
আবু ত্বালিবের এই করুণ বিদায়ে ব্যথিত ভ্রাতা আববাস (রাঃ) একদিন ভাতিজা রাসূলের কাছে তার প্রাণপ্রিয় চাচার আখেরাতের অবস্থা কেমন হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘জাহান্নামবাসীদের মধ্যে সবচেয়ে হালকা আযাব প্রাপ্ত হবে আবু তালিব। তিনি আগুনের দুটি জুতা পরিহিত হবেন, যাতে তার মাথার মগয গলে টগবগ করবে’।
খাদীজা (রাঃ)-এর মৃত্যু (রামাযান ১০ম নববী বর্ষ):
স্নেহশীল চাচা আবু তালিবের মৃত্যুর মাত্র দুমাস বা তিন মাস পরে দশম নববী বর্ষের রামাযান মাসে প্রাণাধিক প্রিয়া স্ত্রী খাদীজাতুল কুবরা ‘তাহেরা’-র মৃত্যু হয়। এ সময় তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৫ বছর এবং রাসূলের বয়স ছিল ৫০ বছর। তাঁদের দাম্পত্য জীবন স্থায়ী হয়েছিল ২৫ বছর। দীর্ঘ তিন বছর যাবৎ বয়কটকালীন নিদারুণ কষ্ট অবসানের মাত্র ৬ মাসের মাথায় চাচা ও ৮ মাসের মাথায় স্ত্রীকে হারিয়ে শত্রু পরিবেষ্টিত ও আশ্রয়হারা নবীর অবস্থা কেমন হয়েছিল, তা চিন্তাশীল মাত্রই বুঝতে পারেন।
চাচা আবু তালেব ছিলেন সামাজিক জীবনে রাসূলের জন্য ঢাল স্বরূপ। অন্যদিকে পারিবারিক ও অর্থনৈতিক জীবনে খাদীজা ছিলেন রাসূলের বিশ্বস্ততম নির্ভরকেন্দ্র। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, ‘বিশ্বে পূর্ণতাপ্রাপ্ত মহিলা হলেন চারজন। ফেরাঊনের স্ত্রী আসিয়া, ইমরানের কন্যা মারিয়াম, খাদীজা বিনতে খুওয়াইলিদ ও তার কন্যা ফাতিমাতুয যাহরা (রাঃ)। তিনি ছিলেন সেই মহীয়সী মহিলা যাকে আল্লাহ পাক জিব্রীল মারফত সালাম পাঠান এবং জান্নাতে তার জন্য বিশেষভাবে নির্মিত মতিমহলের সুসংবাদ দেন।
তিনিই একমাত্র স্ত্রী যার জীবদ্দশায় রাসূল (সাঃ) অন্য কোন স্ত্রী গ্রহণ করেননি এবং তার মৃত্যুর পরেও আজীবন রাসূল (সাঃ) তাকে বারবার স্মরণ করেছেন। অন্য স্ত্রীদের সামনে অকুণ্ঠচিত্তে তার প্রশংসা করেছেন। এমনকি তার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে খাদীজার বান্ধবীদের কাছেও উপঢৌকন পাঠাতেন। অল্প সময়ের ব্যবধানে চাচা ও খাদীজার মৃত্যু হওয়ার কারণে আল্লাহর রাসূল এই বছরকে عام الحزن বা দুঃখের বছর বলে অভিহিত করেন।
সওদার সাথে বিবাহ:
খাদীজা (রাঃ)-এর মৃত্যুর পর বিপর্যস্ত সংসারের হাল ধরার জন্য এবং মাতৃহারা কন্যাদের দেখাশুনার জন্য রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সাওদাহ বিনতে যাম‘আহ নাম্নী জনৈকা বিধবা মহিলাকে বিবাহ করেন ১০ম নববী বর্ষের শাওয়াল মাসে।
ত্বায়েফ গমন (শাওয়াল ১০ম নববী বর্ষ):
খাদীজার মৃত্যুর পরবর্তী মাসে অর্থাৎ দশম নববী বর্ষের শাওয়াল মাস মোতাবেক ৬১৯ খৃষ্টাব্দের গ্রীষ্মকালে মে মাসের শেষে অথবা জুন মাসের প্রথমে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) স্বীয় মুক্তদাস যায়েদ বিন হারেছাহকে সাথে নিয়ে প্রধানতঃ নতুন সাহায্যকারীর সন্ধানে পদব্রজে ত্বায়েফ রওয়ানা হন। যা ছিল মক্কা হ’তে প্রায় ষাট মাইল দূরে।
অতঃপর ত্বায়েফ পৌঁছে তিনি সেখানকার বনু ছাক্বীফ গোত্রের তিন নেতা তিন সহোদর ভাই ইবনু আব্দে ইয়ালীল, মাসঊদ ও হাবীব-এর সাথে সাক্ষাত করেন এবং তাদেরকে তাওহীদের দাওয়াত দেন। সাথে সাথে ইসলামকে সাহায্য করার জন্য তিনি তাদের প্রতি আহবান জানান। উক্ত তিনভাইয়ের একজনের কাছে কুরায়েশ গোত্র বনু জুমাহ (بنو جمح) -এর একজন মহিলা বিবাহিতা ছিলেন (ইবনু হিশাম)। সেই আত্মীয়তার সূত্র ধরেই রাসূল (সাঃ) সেখানে গিয়েছিলেন। কিন্তু তিনজনই তাঁকে নিরাশ করল।
একজন বলল, সে কা‘বার গোলাফ ছিঁড়ে ফেলবে, যদি আল্লাহ তোমাকে রাসূল করে পাঠিয়ে থাকেন’।
অন্যজন বলল, ‘আল্লাহ কি তোমাকে ব্যতীত অন্য কাউকে পাননি’? ‘যার একটা সওয়ারী পর্যন্ত নেই! যদি কাউকে রাসূল বানানোর দরকার হত, তাহলে তো আল্লাহ কোন শাসক বা নেতাকে রাসূল করে পাঠাতে পারতেন’।
তৃতীয় জন বলল,‘আমি তোমার সাথে কোন কথাই বলব না। কেননা যদি তুমি সত্যিকারের নবী হও, তবে তোমার কথা প্রত্যাখ্যান করা আমার জন্য হবে সবচেয়ে বিপজ্জনক। আর যদি তুমি আল্লাহর নামে মিথ্যা প্রচারে লিপ্ত হয়ে থাক, তবে তোমার সাথে কথা বলা সমীচীন নয়।
নেতাদের কাছ থেকে নিরাশ হয়ে এবার তিনি অন্যদের কাছে দাওয়াত দিতে থাকেন। কিন্তু সবার একই কথা ‘তুমি আমাদের শহর থেকে বেরিয়ে যাও’। অবশেষে দশদিন পর তিনি সেখান থেকে প্রত্যাবর্তনের জন্য পা বাড়ান। এমন সময় নেতাদের উস্কানীতে একদল ছোকরা এসে তাঁকে ঘিরে ধরে অশ্রাব্য ভাষায় গালি-গালাজ ও হৈ চৈ শুরু করে দিল। এক পর্যায়ে তাঁকে লক্ষ্য করে পাথর ছুঁড়তে আরম্ভ করল।
যাতে তাঁর পায়ের গোড়ালী ফেটে রক্তে জুতা ভরে গেল’। এ সময় যায়েদ বিন হারেছাহ ঢালের মত থেকে রাসূলকে প্রস্তরবৃষ্টি থেকে রক্ষার চেষ্টা করেন। এইভাবে রক্তাক্ত দেহে তিন মাইল হেঁটে তায়েফ শহরের বাইরে এক আঙ্গুর বাগিচায় ক্লান্ত-শ্রান্ত অবস্থায় তিনি আশ্রয় নেন। তখন ছোকরার দল ফিরে যায়।
মযলূমের দোআ:
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বাগানে প্রবেশ করে আঙ্গুর গাছের ছায়ায় একটি দেয়ালে ঠেস দিয়ে বসে পড়লেন। এই সময় ক্লান্ত-শ্রান্ত দেহ নিয়ে ব্যাকুল মনে আল্লাহর নিকটে যে দোআ তিনি করেছিলেন, তা (মযলূমের দোআ হিসাবে) ইতিহাসে প্রসিদ্ধ। দো‘আটি ছিল নিম্নরূপ:
‘হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকটে আমার শক্তির দুর্বলতা, কৌশলের স্বল্পতা ও মানুষের নিকটে অপদস্থ হওয়ার অভিযোগ পেশ করছি- হে দয়ালুগণের সেরা! হে দুর্বলদের প্রতিপালক! তুমিই আমার একমাত্র পালনকর্তা। কাদের কাছে তুমি আমাকে সোপর্দ করেছ? তুমি কি আমাকে এমন দূর অনাত্মীয়ের কাছে পাঠিয়েছ যে আমাকে কষ্ট দেয়? অথবা এমন শত্রুর কাছে যাকে তুমি আমার কাজের মালিক-মুখতার বানিয়ে দিয়েছ? য
দি আমার উপরে তোমার কোন ক্রোধ না থাকে, তাহলে আমি কোন কিছুরই পরোয়া করি না। কিন্তু তোমার ক্ষমা আমার জন্য অনেক প্রশস্ত। আমি তোমার চেহারার জ্যোতির আশ্রয় প্রার্থনা করছি, যার জন্য সব অন্ধকার আলোকিত হয়ে যায় এবং দুনিয়া ও আখেরাতের কর্মসমূহ সুষ্ঠু হয়ে যায়- এই বিষয় হতে যে, আমার উপরে তোমার গযব নাযিল হৌক অথবা তোমার ক্রোধ আপতিত হৌক। কেবল তোমারই সন্তুষ্টি কামনা করব, যতক্ষণ না তুমি খুশী হও। নেই কোন শক্তি নেই কোন ক্ষমতা তুমি ব্যতীত।
আঙ্গুর বাগানের মালিক দু’ভাই ওৎবা ও শায়বা যখন দূর থেকে রাসূলের এ দুর্দশাগ্রস্ত অবস্থা দেখল, তখন তারা দয়াপরবশ হয়ে তাদের খৃষ্টান গোলাম ‘আদ্দাস’-এর মাধ্যমে এক গোছা আঙ্গুর পাঠিয়ে দিল। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ‘বিসমিল্লাহ’ বলে তা হাতে নিয়ে খেতে আরম্ভ করলেন। বিস্মিত হয়ে আদাস বলে উঠল, এ ধরনের কথা তো এ অঞ্চলের লোকদের মুখে কখনো শুনিনি’? রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, তুমি কোন দেশের লোক?
তোমার ধর্ম কি? সে বলল, আমি একজন খৃষ্টান। আমি ‘নীনাওয়া’-এর বাসিন্দা। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, নেককার ব্যক্তি ইউনুস বিন মাত্তা -এর জনপদের লোক? লোকটি আশ্চর্য হয়ে বলল, আপনি ইউনুস বিন মাত্তা-কে কিভাবে চিনলেন? রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, ‘তিনি আমার ভাই। তিনি নবী ছিলেন এবং আমিও নবী।
ত্বায়েফ হ’তে মক্কার পথে:
কিছুক্ষণ বিশ্রামের পর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ব্যথিত ও ভারাক্রান্ত মনে সেখান থেকে উঠে মক্কাভিমুখে রওয়ানা হলেন। পথিমধ্যে ‘ক্বারনুল মানাযিল’ নামক স্থানে পৌঁছলে জিব্রীল (আঃ) ‘মালাকুল জিবাল’ বা পাহাড় সমূহের নিয়ন্ত্রক ফেরেশতাকে সাথে নিয়ে অবতীর্ণ হলেন। জিব্রীল তাঁকে বললেন, ‘আপনার সম্প্রদায় আপনাকে কি কথা বলেছে এবং আপনার প্রতি কিরূপ আচরণ করেছে, সবই আল্লাহ দেখেছেন ও শুনেছেন। এক্ষণে তিনি আপনার নিকটে পাহাড় সমূহের নিয়ন্ত্রক ফেরেশতাকে পাঠিয়েছেন তাকে আপনি তাদের বিষয়ে যা ইচ্ছা হুকুম করুন’।
অতঃপর ‘মালাকুল জিবাল’ এসে রাসূলকে সালাম দিয়ে বলল, ‘যদি আপনি চান যে, আমি দুই পাহাড়কে একত্রিত করে এদেরকে পিষে মারি, তাহলে আমি তাই-ই করব’। ফেরেশতার জবাবে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, ‘না। বরং আমি আশা করি যে, আল্লাহ তাদের পৃষ্ঠদেশ হতে এমন বংশধর সৃষ্টি করবেন, যারা কেবলমাত্র মহান আল্লাহরই ইবাদত করবে এবং তাঁর সাথে কাউকে শরীক করবে না’।
এই ঘটনায় আল্লাহর নবী (সাঃ) হৃদয়ে প্রশান্তি অনুভব করলেন এবং সব দুঃখ-কষ্ট ভুলে গিয়ে পুনরায় পথ চলতে শুরু করলেন। অতঃপর ‘নাখ্লা’ উপত্যকায় পৌঁছে সেখানকার জনপদে কয়েকদিন অবস্থান করলেন। এখানেই জিনদের ইসলাম গ্রহণের ঐতিহাসিক ঘটনা ঘটে।
যা সূরা আহক্বাফ ২৯, ৩০ ও ৩১ আয়াতে এবং সূরা জিন ১-১৫ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে। এতে আল্লাহর রাসূল (সাঃ) মনের মধ্যে আরও শক্তি অনুভব করেন। তিনি নিশ্চিত হ’লেন যে, কোন শক্তিই তার দাওয়াতকে বন্ধ করতে পারবে না। কেননা আহক্বাফ ৩২ আয়াত নাযিল করে এ সময়েই আল্লাহ তাকে নিশ্চিত করেছিলেন যে,
وَمَن لاَّ يُجِبْ دَاعِيَ اللهِ فَلَيْسَ بِمُع ْجِزٍ فِي الْأَرْضِ وَلَيْسَ لَهُ مِنْ دُوْنِهِ أَوْلِيَاءَ أُوْلَئِكَ فِيْ ضَلاَلٍ مُّبِيْنٍ-
‘যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে আহবানকারীর ডাকে সাড়া না দেয়, সে ব্যক্তি এ পৃথিবীতে আল্লাহকে পরাজিত করতে পারবে না এবং আল্লাহ ব্যতীত সে কাউকে সাহায্যকারীও পাবে না। বস্ত্ততঃ এলোকগুলিই হল স্পষ্ট ভ্রষ্টতার মধ্যে নিপতিত’ (আহক্বাফ ৪৬/৩২)।
উপরোক্ত ঘটনায় প্রমাণিত হয় যে, শেষনবী (সাঃ) জিন ও ইনসানের নবী ছিলেন। বরং তিনি সকল সৃষ্ট জীবের নবী ছিলেন। যেমন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, و أرسلتُ إلى الخلق كافة و خُتِمَ بِىَ الن بيُّون- ‘আমি সকল সৃষ্ট জীবের প্রতি প্রেরিত হয়েছি এবং আমাকে দিয়ে নবীদের সিলসিলা সমাপ্ত করা হয়েছে’।
মক্কায় প্রত্যাবর্তন:
অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) নাখলা উপত্যকা হতে মক্কাভিমুখে রওয়ানা করে হেরা গুহার পাদদেশে পৌঁছে মক্কায় প্রবেশের জন্য সম্ভাব্য কিছু হিতাকাংখীর নিকটে খবর পাঠালেন। কিন্তু কেউ ঝুঁকি নিতে চায়নি। অবশেষে মুত্ব‘ইম বিন ‘আদী রাযী হন এবং তার সম্মতিক্রমে যায়েদ বিন হারেছাহকে নিয়ে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) মক্কায় এসে মসজিদুল হারামে প্রবেশ করেন ও হাজরে আসওয়াদ চুম্বন করেন।
অতঃপর দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করেন। এ সময় মুত্ব‘ইম ও তার পুত্র সশস্ত্র অবস্থায় তাঁকে পাহারা দেয় এবং পরে তাঁকে বাড়ীতে পৌঁছে দেয়। আবু জাহল মুত্ব‘ইমকে প্রশ্ন করল ‘তুমি কি তাকে আশ্রয় দিয়েছ না, অনুসারী মুসলিম হয়ে গেছ’? মুত্ব‘ইম জবাবে বলেন, ‘আশ্রয় দিয়েছি মাত্র’। তখন আবু জাহল বলে উঠল, আমরাও তাকে আশ্রয় দিলাম, যাকে তুমি আশ্রয় দিয়েছ’।
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) মুত্ব‘ইম বিন আদীর এই সৌজন্যের কথা কখনো ভুলেননি। এই ঘটনার প্রায় পাঁচ বছর পরে সংঘটিত বদরের যুদ্ধে বন্দী কাফেরদের মুক্তির ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘যদি মুত্ব‘ইম বিন আদী বেঁচে থাকত এবং এইসব দুর্গন্ধময় মানুষগুলোর জন্য সুফারিশ করত, তাহলে তার খাতিরে আমি এদের সবাইকে ছেড়ে দিতাম’।