Latest News

শেখ হাসিনার ‘রাজনৈতিক পুনর্বাসনে’ সরকার কিংবা সেনাবাহিনীর ওপরেও চাপ দিবে ভারত! (গুরুত্বপূর্ণ খবর)

ভারতে সরকারের শীর্ষ নীতি-নির্ধারকদের পর্যায়ে একটা প্রভাবশালী মহল এখনও বিশ্বাস করেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক ল্যান্ডস্কেপে শেখ হাসিনা মোটেই ‘চিরতরে ফুরিয়ে যাননি’ এবং উপযুক্ত সময় ও পরিবেশ এলে ভারতের উচিত হবে তার ‘রাজনৈতিক পুনর্বাসনে’ সাহায্য করা। বিবিসি বাংলা এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনার জন্য এই পথটার হয়ত এখনই বাস্তবায়ন সম্ভব নয়– কিন্তু ভারতে কর্মকর্তা ও পর্যবেক্ষকদের একটা অংশ বিশ্বাস করেন কিছুদিন পরে উপযুক্ত পরিস্থিতি এলে বাংলাদেশে শেখ হাসিনার ‘রাজনৈতিক প্রত্যাবর্তনে’র জন্যও ভারত চেষ্টা করতে পারে– কারণ দল বা রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আওয়ামী লীগ এখনও ফুরিয়ে যায়নি এবং দলের সর্বোচ্চ নেত্রী হিসেবে তিনি দেশে ফিরে সংগঠনের হাল ধরতেই পারেন!

শেখ হাসিনা অন্তত তিন-তিনবার দুর্ধর্ষ ‘কামব্যাক’ করেছেন – ‘৮১তে, ‘৯৬তে আর ২০০৮-এ!” তিনি আরও যোগ করেন, “এই তিনবারই অনেকে ভেবেছিলেন, তার পক্ষে হয়ত ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব না। কিন্তু প্রতিবারই তিনি তাদের ভুল প্রমাণ করেছেন!-অধ্যাপক শ্রীরাধা দত্ত, ওপি জিন্দাল গ্লোবাল ইউনিভার্সিটি

এই চিন্তাধারায় বিশ্বাস করেন, এমনই একজন কর্মকর্তা বিবিসিকে এ বিষয়ে মতামত দিয়েছেন, “মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশের রাজনীতিতে শেখ হাসিনা অন্তত তিন-তিনবার দুর্ধর্ষ ‘কামব্যাক’ করেছেন – ‘৮১তে, ‘৯৬তে আর ২০০৮-এ!” তিনি আরও যোগ করেন, “এই তিনবারই অনেকে ভেবেছিলেন, তার পক্ষে হয়ত ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব না। কিন্তু প্রতিবারই তিনি তাদের ভুল প্রমাণ করেছেন!”

তবে এটাও মনে রাখার প্রয়োজন, তখন কিন্তু তার বয়স অনেক কম ছিল। আর এখন তিনি ৭৬ পেরিয়ে সামনের মাসেই ৭৭ পূর্ণ করতে চলেছেন – সেটা কি কোনও বাধা হবে না? জবাবে ওই কর্মকর্তা বলছেন, “বয়স হয়ত পুরোপুরি তার সাথে নেই, কিন্তু ৮৪ বছর বয়সে মুহাম্মদ ইউনূস যদি জীবনে প্রথম সরকারের প্রধান হতে পারেন, তাহলে তার চেয়ে বয়সে অনেক ছোট শেখ হাসিনা পারবেন না, কেন আমরা এটা ধরে নিচ্ছি?”

মোদ্দা কথাটা হলো, শেখ হাসিনা একদিন বাংলাদেশে ফিরে আবার আওয়ামী লীগের হাল ধরতে পারেন– দিল্লিতে একটা অংশ খুব ‘সিরিয়াসলি’ এই কথাটা বিশ্বাস করেন। এটার জন্য ভারতকে দরকার হলে সে দেশের অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর এবং প্রয়োজনে সেনাবাহিনীর ওপরেও চাপ দিতে হবে বলে তারা যুক্তি দিচ্ছেন।

তারা আরও বলছেন, আওয়ামী লীগ বাংলাদেশে কোনও নিষিদ্ধ সংগঠন নয়, সারা দেশে তাদের শক্তিশালী নেটওয়ার্ক আছে– সেই দলের সর্বোচ্চ নেত্রী হিসেবে শেখ হাসিনা আগামী দিনে বাংলাদেশে ফিরতেই পারেন।

তার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলাগুলোতেও তিনি বিচারের সম্মুখীন হতে পারেন, হয়ত পরবর্তী নির্বাচনে তার লড়ার ক্ষেত্রেও বাধা থাকতে পারে– কিন্তু তার দেশে ফেরার রাস্তা এবং রাজনীতিতে নতুন করে প্রবেশ বন্ধ করাটা কঠিন বলেই এই মহলের অভিমত।

আরও পড়ুন: গত ২৩ মাসে জালিয়াতি করে রপ্তানি বেশি দেখানো হয় ২৬ বিলিয়ন ডলার

রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও ওপি জিন্দাল গ্লোবাল ইউনিভার্সিটিতে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক শ্রীরাধা দত্ত আবার মনে করেন, আওয়ামী লীগকে পুনরুজ্জীবিত করতে ভারত প্রচ্ছন্ন সমর্থন হয়ত দিতেই পারে – কিন্তু শেখ হাসিনাকে পুনর্বাসিত করাটা খুবই কঠিন কাজ হবে।

তিনি বিবিসিকে বলছিলেন, “অদূর ভবিষ্যতে শেখ হাসিনাকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগ ঘুরে দাঁড়াতে পারবে বলে আমি মনে করি না।” তিনি আরও বলেন, “আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে টিকে থাকতে পারবে নিশ্চয়, কারণ তাদের নিশ্চিহ্ন করা অত সহজ নয়– কিন্তু দলের নেতৃত্বে বড়সড় পরিবর্তন আনা ছাড়া কোনও উপায় নেই!”

ফলে বাংলাদেশে পরবর্তী নির্বাচন যখনই হোক, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ তাতে লড়ছে– এটাকে তিনি অন্তত কোনও বাস্তবসম্মত দৃশ্যপট (‘ফিজিবল সিনারিও’) বলে মনে করছেন না। কিন্তু বিগত প্রায় পঞ্চাশ বছর ধরে শেখ হাসিনার ওপর ভারত যে পরিমাণ ‘রাজনৈতিক বিনিয়োগ’ করেছে– তাতে দিল্লির একটা প্রভাবশালী অংশ তাকে এখনই খরচের খাতায় ফেলতে কিছুতেই রাজি নন!

আরও যে-সকল উপায় অবলম্বন করতে পারে ভারত

বিভিন্ন বিশেষজ্ঞগণ মনে করেন, মূলত দীর্ঘ দিনের পরীক্ষিত বন্ধু হওয়ায় শেখ হাসিনাকে ভারত যেকোনো উপায়ে সাহায্য করতে প্রস্তত থাকবে। গত মাসেও যিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী পদে ছিলেন, সেই শেখ হাসিনা ভারতে এসে অবস্থান করছেন তিন সপ্তাহেরও ওপর হয়ে গেল। চরম গোপনীয়তা ও কড়া সুরক্ষার মধ্যে ভারত সরকার আপাতত তার (সঙ্গে তার ছোট বোন শেখ রেহানার) থাকার ব্যবস্থা করেছে ঠিকই– কিন্তু তার সম্বন্ধে কী চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে সে বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও কিছুই জানানো হয়নি।

পাশাপাশি ভারত-বাংলাদেশ প্রত্যর্পণ চুক্তির আওতায় শেখ হাসিনাকে হস্তান্তরের জন্য ঢাকার কাছ থেকে যদি কোনও অনুরোধ আসে– সেটা যে কোনও না কোনও যুক্তিতে দিল্লি খারিজ করে দেবে তাও একরকম নিশ্চিত। কাজেই শেখ হাসিনাকে বিচারের জন্য বাংলাদেশের হাতে তুলে দেওয়াটাকে ভারতের জন্য কোনও বাস্তবসম্মত ‘অপশন’ বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন না।

এরই মধ্যে গত সপ্তাহে বাংলাদেশ সরকার শেখ হাসিনার ‘ডিপ্লোম্যাটিক’ বা অফিশিয়াল পাসপোর্ট প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় ভারতে এখন তার অবস্থানের বৈধ ভিত্তিটা কী, সে প্রশ্নও উঠতে শুরু করেছে। এই পটভূমিতে দিল্লিতে ভারতের শীর্ষ পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তা ও বিশ্লেষকদের সঙ্গে কথা বলে বিবিসি যেটা আভাস পেয়েছে, তা হলো এই মুহূর্তে শেখ হাসিনাকে নিয়ে ভারতের সামনে কার্যত ‘রাজনৈতিক পুনর্বাসন’ ছাড়াও আরও দুটি ‘অপশন’ বা রাস্তা খোলা আছে।

প্রথম রাস্তাটা হলো, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর জন্য তৃতীয় কোনও দেশে আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা, যেখানে তিনি নিরাপদে ও সুরক্ষিত পরিবেশে থাকার নিশ্চয়তা পাবেন। দ্বিতীয় অপশনটা হলো, শেখ হাসিনাকে রাজনৈতিক আশ্রয় (‘পলিটিক্যাল অ্যাসাইলাম’) দিয়ে ভারতেই এখনকার মতো রেখে দেওয়া।

এর মধ্যে ভারতের কাছে অপশন হিসেবে প্রথমটাই যে ‘সেরা’– তা নিয়েও অবশ্য কূটনৈতিক বা থিঙ্কট্যাঙ্ক মহলে কোনও সন্দেহ নেই। কারণ, তিনি ভারতেই রয়ে গেলে সেটা আগামী দিনে দিল্লি-ঢাকা সম্পর্কের ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে বলে তারা মনে করছেন।

এর পাশাপাশি ভারত-বাংলাদেশ প্রত্যর্পণ চুক্তির আওতায় শেখ হাসিনাকে হস্তান্তরের জন্য ঢাকার কাছ থেকে যদি কোনও অনুরোধ আসে– সেটা যে কোনও না কোনও যুক্তিতে দিল্লি খারিজ করে দেবে তাও একরকম নিশ্চিত। কাজেই শেখ হাসিনাকে বিচারের জন্য বাংলাদেশের হাতে তুলে দেওয়াটাকে ভারতের জন্য কোনও বাস্তবসম্মত ‘অপশন’ বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন না।

তৃতীয় কোনও বন্ধু দেশে পাঠানো?
ভারতের সর্বশেষ সরকারি বক্তব্য অনুযায়ী, শেখ হাসিনার এবারের ভারতে আসাটা ছিল ‘সাময়িক’। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর গত ৬ই অগাস্ট দেশের পার্লামেন্টে বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে বিবৃতি দিতে গিয়ে এ প্রসঙ্গে ‘ফর দ্য মোমেন্ট’ (তখনকার মতো) কথাটা ব্যবহার করেছিলেন – এবং তারপর থেকে সরকার আর এ বিষয়ে নতুন করে কোনও ভাষ্য দেয়নি।

তার কারণ হলো, শেখ হাসিনাকে নিরাপদ কোনও তৃতীয় দেশে পাঠানোর চেষ্টা এখনও পুরোদস্তুর অব্যাহত আছে। তবে সেটা যদি চট করে সফল না-ও হয়, তাহলে দিল্লীও তাকে রাজনৈতিক আশ্রয় দিয়ে ‘যতদিন খুশি’ ভারতে রাখতে কোনও দ্বিধা করবে না। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তার কথায়, “উই আর হোপিং ফর দ্য বেস্ট, প্রিপেয়ারিং ফর দ্য ওয়র্স্ট!”

আরও পড়ুন: শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছিল ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক পান্নাকে

অর্থাৎ তিনি বোঝাতে চেয়েছেন ভারত এখনও আশা করছে শেখ হাসিনার ক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালোটাই ঘটবে (তৃতীয় কোনও বন্ধু দেশে তিনি গিয়ে থাকতে পারবেন), কিন্তু সেটা যদি কোনও কারণে সম্ভব না হয় তাহলে সবচেয়ে খারাপটার জন্যও (শেখ হাসিনাকে লম্বা সময়ের জন্য ভারতেই রেখে দিতে হবে) দিল্লি প্রস্তুত থাকবে।

রাজনৈতিক আশ্রয় প্রদান?
একান্ত প্রয়োজন হলে শেখ হাসিনাকে ভারতেই রাজনৈতিক আশ্রয় দিয়ে রেখে দিতে যে ভারত যে দ্বিধা করবে না, সেই ইঙ্গিতও কিন্তু দিল্লিতে এখন পাওয়া যাচ্ছে।

অতীতে তিব্বতি ধর্মগুরু দালাই লামা, নেপালের রাজা ত্রিভুবন বীর বিক্রম শাহ বা আফগান প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নাজিবুল্লাহ্-র মতো বহু বিদেশি নেতাকে ভারত রাজনৈতিক আশ্রয় দিয়েছে, এমনকি শেখ হাসিনা নিজেও ১৯৭৫ সালে সপরিবার ভারতের আতিথেয়তা পেয়েছিলেন।

তবে এই পদক্ষেপ যদি একান্তই নিতে হয়, তবে ভারত-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে তার প্রভাব কী পড়বে, সেটাও দিল্লিকে খেয়াল রাখতে হবে। পর্যবেক্ষকরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, ১৯৫৯ সালে দালাই লামাকে রাজনৈতিক আশ্রয় দেওয়ার পর থেকে ভারত-চীন সম্পর্কে যে তিক্ততা সৃষ্টি হয়েছিল– আজ ৬৫ বছর পরেও কিন্তু তার রেশ রয়ে গেছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button