World wide News

বন্যায় স্বাস্থ্যঝুঁকি মোকাবিলায় যা করণীয় (Latest Update)


বাংলাদেশে বন্যা একটি নিয়মিত প্রাকৃতিক দুর্যোগ। প্রতিবছরই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের কোনো না কোনো জায়গায় বন্যা হয়। এ বছর ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়েছে দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে লাখ লাখ মানুষ। নিজের বাড়িঘর ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছে বন্যার্ত মানুষ। বন্যার ফলে সৃষ্ট পানি মানুষের জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত করে তোলার পাশাপাশি নানা স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণও হয়ে দাঁড়ায়। এসব স্বাস্থ্যঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন হওয়া এবং সঠিকভাবে মোকাবিলা করাই বন্যার সময়ে সুস্থ থাকার মূল চাবিকাঠি। বন্যার সময় নানা ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে।

সেগুলো কী কী হতে পারে, সেদিকে নজর দিতে পারি—

পানিবাহিত রোগ: বন্যায় নিরাপদ পানির অভাবে অনেকেই পান ও দৈনন্দিন কাজে অনিরাপদ পানি ব্যবহার করতে বাধ্য হন। আবার নর্দমা ও সুয়ারেজ লাইনের পানি উপচে নিরাপদ পানির উৎসকে দূষিত করে। ফলে পানিবাহিত রোগ যেমন ডায়রিয়া, কলেরা, টাইফয়েড, হেপাটাইটিস এ, লেপটোস্পাইরোসিস বেড়ে যায়।

মশাবাহিত রোগ: বন্যার পানি বাড়ি বা বাড়ির পেছনের বাগানে জমে পানিবাহিত রোগের পাশাপাশি মশাবাহিত রোগ যেমন ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়াও বেড়ে যায়। পাশাপাশি সাপের প্রকোপ বেড়ে যায়।

ছত্রাকজাতীয় রোগ: দীর্ঘক্ষণ হাত-পা ভেজা থাকার কারণে চামড়ায় ছত্রাকজাতীয় সংক্রমণ হয়। আশ্রয়কেন্দ্রে একসঙ্গে অনেক মানুষ থাকায় ছত্রাকজাতীয় সংক্রমণ একজন থেকে অন্যজনের শরীরে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।

ফুসফুসে সংক্রমণ: ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়াজনিত ফুসফুসের সংক্রমণ এই সময়ের খুব সাধারণ একটা সমস্যা। আক্রান্ত ব্যক্তিরা কাশি, জ্বর ও শ্বাসকষ্টে ভুগতে থাকেন।

বন্যার পানিতে ডুবে যাওয়া: বন্যায় সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হলো পানিতে ডুবে মৃত্যু। শিশুদের ক্ষেত্রে এ হার সবচেয়ে বেশি।

আঘাত পাওয়া: বাড়িঘর বা গাছের ডালপালা ভেঙে, পাহাড়ধসে আঘাত পাওয়া বন্যার সময় খুবই সাধারণ ঘটনা।

মানসিক সমস্যা: বন্যায় মানুষের শারীরিক সমস্যাগুলোকে আমরা যেমন গুরুত্ব দিই, মানসিক সমস্যাগুলোকে তেমনি অবহেলা করি বা ভুলে যাই। কিন্তু সহায়-সম্পত্তি হারিয়ে বেশির ভাগ মানুষই বন্যা ও বন্যাপরবর্তী সময়ে মন খারাপ, দুশ্চিন্তা, অস্থিরতা, অনিদ্রা, মানসিক বিপর্যয়ে ভোগেন। পরবর্তীকালে একটু বৃষ্টি হলেই অস্থির হয়ে যেতে দেখা যায়।

অপুষ্টি: বন্যা ও পরবর্তী সময়ে দুর্গত এলাকায় খাবারের অপ্রতুলতা, ফসলের মাঠের ক্ষতি, গবাদিপশু ও পুকুরের মাছে ভেসে যাওয়ায় খাদ্যসংকট দেখা দেয়। ফলস্বরূপ মানুষ অপুষ্টিতে ভোগে।

আমরা কী করতে পারি—

বন্যায় স্বাস্থ্যঝুঁকি আমরা পুরোপুরি এড়াতে পারি না। অনেক জায়গায় স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও হাসপাতালে পানি ঢুকে যাওয়ায় চিকিৎসা ব্যবস্থাও ব্যাহত হয়। এ জন্য আগে থেকে বন্যার মোকাবিলার প্রস্তুতি নেওয়া ও স্বাস্থ্যশিক্ষা দেওয়া জরুরি। সে ক্ষেত্রে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থা, স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানকেও এগিয়ে আসতে হবে। কিছু প্রতিকার মাথায় রাখতে হবে।

> পরিচ্ছন্নতা মানতে হবে, খাবারের আগে, রান্নার আগে হাত ভালো করে সাবান দিয়ে ধুতে হবে।

> দৈনন্দিন কাজে নিরাপদ পানি ব্যবহার করতে হবে। নিরাপদ পানি না থাকলে পানি ফুটিয়ে অথবা ক্লোরিন দিয়ে ব্যবহার করতে হবে।

> পর্যাপ্ত শুকনা খাবার ও খাওয়ার স্যালাইন রাখতে হবে।

> ডায়রিয়া বা পানিশূন্যতা হলে অবশ্যই খাওয়ার স্যালাইন খেতে হবে।

> বন্যাকবলিত এলাকায় ও আশ্রয়কেন্দ্রে উঁচু স্থানে বাথরুম স্থাপন করতে হবে।

> শিশুদের নিরাপদে রাখতে হবে। তারা যেন পানিতে পড়ে না যায়, সে বিষয়ে অবশ্যই লক্ষ রাখতে হবে।

> মশারি টানিয়ে ঘুমান এবং দিনে রাতে সবসময় মশা প্রতিরোধক স্প্রে বা ক্রিম ব্যবহার করুন। মশার জন্মস্থান ধ্বংস করতে জমে থাকা পানি সরিয়ে ফেলুন। বিশেষ করে ফুলের টব, বালতি বা অন্য যেকোনো পাত্রে পানি জমে থাকতে দেবেন না।

> প্রাথমিক চিকিৎসা কিটে ব্যান্ডেজ, গজ, অ্যান্টিসেপ্টিক ক্রিম, প্যারাসিটামল, ওআরএস, এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় ওষুধ রাখুন। ত্বকে কোনো আঘাত বা সংক্রমণ হলে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা করুন।

বেড়েছে মুরগির দাম, লাগাম টানা যাচ্ছে না মাছের

> জরুরি মেডিকেল টিম প্রস্তুত রাখতে হবে—যেখানে ডাক্তার, দক্ষ স্বাস্থ্যকর্মী, প্রয়োজনীয় ওষুধ থাকতে হবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button