যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষার সুযোগ পেলেন মাভাবিপ্রবি ক্রিমিনোলজির ৩ শিক্ষার্থী (গুরুত্বপূর্ণ খবর)
মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স (সিপিএস) বিভাগের তিনজন শিক্ষার্থী স্কলারশিপ পেয়ে যুক্তরাষ্ট্রে মাস্টার্স প্রোগ্রামের জন্য নির্বাচিত হয়েছেন। এদের মধ্যে দুইজন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের একই প্রোগ্রামে উচ্চশিক্ষার সুযোগ পেয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রে স্কলারশিপ পাওয়া সিপিএস বিভাগের তিনজন শিক্ষার্থী হলেন—উচ্চশিক্ষালয়টির ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের এবং সিপিএস বিভাগের ১৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মো. আকরামুল হাসান, ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের এবং বিভাগটির ১৪তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ফাহাদ বিন ইসলাম খান ও পাভেল আহমেদ।
স্কলারশিপে মনোনীত এই তিন শিক্ষার্থীই ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা হাতে পেয়েছেন। এরমধ্যে মো. আকরামুল হাসান গত ২৩ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছেন এবং চলতি সেমিস্টারে অধ্যয়ন শুরু করেছেন।
আকরামুল ইউনিভার্সিটি অব মিসিসিপিতে ক্রিমিনাল জাস্টিস বিষয়ে এমএসসি প্রোগ্রামে ফুল স্কলারশিপের পাশাপাশি গ্র্যাজুয়েট রিসার্চ অ্যান্ড টিচিং অ্যাসিস্ট্যান্টশিপের অ্যাপয়েন্টমেন্ট পেয়েছেন এবং এই প্রতিষ্ঠানটিতেই তিনি অধ্যয়ন করছেন। তার স্কলারশিপের মধ্যে রয়েছে, সম্পূর্ণ বিনা বেতনে অধ্যয়নের সুযোগ, হেলথ ইন্স্যুরেন্স সুবিধা, এবং মাসিক স্টাইপেন্ড সুবিধা।
এ ছাড়া ইউনিভার্সিটি অব নর্থ টেক্সাসের ক্রিমিনাল জাস্টিসে এমএসসি প্রোগ্রামে ফুল টিউশন ও গ্র্যাজুয়েট টিচিং অ্যাসিস্ট্যান্টশিপসহ সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। পাশাপাশি এই শিক্ষার্থী ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থিত জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটিতেও ক্রিমিনোলজিতে এমএ প্রোগ্রামে গ্রোবাল লিডার এ্যাওয়ার্ড টিউশন স্কলারশিপসহ গ্র্যাজুয়েট ইন্সট্রাকশনাল অ্যাসিস্টেন্ট পদে সুযোগ পেয়েছিলেন।
এই সাফল্যের বিষয়ে আকরামুল হাসান বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষা অর্জনের স্বপ্নের সারথি আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষকমণ্ডলী, আমার পরিবার ও আমার প্রাণপ্রিয় ‘ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স’ বিভাগের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আমি রিসার্চ ও অ্যাকাডেমিয়ায় অবদান রাখতে চাই। আমি আমার অর্জিত জ্ঞান যেন দেশ ও মানুষের কল্যাণে কাজে লাগাতে পারি সেই আশাবাদ ব্যক্ত করছি।
আকরামুলের মতো একই বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং একই প্রোগ্রামে উচ্চশিক্ষার সুযোগ পেয়েছেন ফাহাদ বিন ইসলাম খান। অর্থাৎ তিনিও ইউনিভার্সিটি অব মিসিসিপিতে ক্রিমিনাল জাস্টিস বিষয়ে এমএসসি প্রোগ্রামে ফুল স্কলারশিপের পাশাপাশি গ্র্যাজুয়েট রিসার্চ অ্যান্ড টিচিং অ্যাসিস্ট্যান্টশিপের অ্যাপয়েন্টমেন্ট পেয়েছেন। তারও স্কলারশিপের মধ্যে রয়েছে, সম্পূর্ণ বিনা বেতনে অধ্যয়নের সুযোগ, হেলথ ইন্স্যুরেন্স সুবিধা, এবং মাসিক স্টাইপেন্ড সুবিধা। এই স্কলারশিপের অধীনে অধ্যয়ন শুরু করতে বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) তিনি যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্যে দেশ ত্যাগ করবেন।
এর বাইরেও ফাহাদ যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটি, জর্জিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অফ নিউ হ্যাভেন, বোলিং গ্রিন স্টেট ইউনিভার্সিটি, নেদারল্যান্ডের ইউট্রেক্ট ইউনিভার্সিটি এবং স্কটল্যান্ডের গ্লাসগো ইউনিভার্সিটি থেকে অফার লেটার পেয়েছেন। এ ছাড়া ইউকের গ্রেট স্কলারশিপ এবং ইউরোপের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ ও জনপ্রিয় ইরাসমাস মুন্ডাস স্কলারশিপও পেয়েছেন তিনি।
ফাহাদ বলেন, দেশে ক্রিমিনোলজি এবং এ ধরনের বিষয়গুলোতে জব ফিল্ড তেমন না থাকায় অনেকে বিদেশে উচ্চশিক্ষায় যাওয়াকে অপশন হিসেবে রাখে। আমি বলবো, এ ক্ষেত্রে বিদেশে যাওয়াটা কোনো অপশন নয়। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া মধ্যবিত্ত শিক্ষার্থী যারা দেশের বাইরে পড়ার জন্য যেতে চাই, তাদের এটাকে কোনো অলটারনেটিভ নয় বরং ফার্স্ট প্রায়োরিটি হিসেবে দেখতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আমি মনে করি আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কারিকুলাম হতে হবে আন্তর্জাতিক মানের। এখানে আরও বেশি মোটিভেশন আসা প্রয়োজন এবং শুরু থেকেই শিক্ষার্থীদের গবেষণার মধ্যে রাখা উচিত। অনেকেই স্কলারশিপ পাওয়া খুব কঠিন বলে মনে করেন। কিন্তু এটা অতটাও কঠিন না। মনের ইচ্ছা থাকলেই বাইরে উচ্চশিক্ষার জন্য যাওয়া সম্ভব।
এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটিতে ক্রিমিনাল জাস্টিস বিষয়ে এমএসসি প্রোগ্রামে ফুল স্কলারশিপের পাশাপাশি গ্র্যাজুয়েট রিসার্চ অ্যান্ড টিচিং অ্যাসিস্ট্যান্টশিপের সুযোগ পেয়েছেন মাভাবিপ্রবির সিপিএস বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী পাভেল আহমেদ। তার স্কলারশিপের মধ্যেও রয়েছে, সম্পূর্ণ বিনা বেতনে অধ্যয়নের সুযোগ, হেলথ ইন্স্যুরেন্স সুবিধা এবং মাসিক স্টাইপেন্ড সুবিধা। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়টিতে অধ্যয়নের উদ্দেশ্যে শীঘ্রই দেশ ত্যাগ করবেন বলে জানিয়েছেন।
এই স্কলারশিপের বাইরেও পাভেল যুক্তরাষ্ট্রের নর্দান এরিজোনা ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব পিটার্সবার্গ, কানাডার অটোয়া ইউনিভার্সিটিসহ বেশ কয়েকটি ইউনিভার্সিটিতে ক্রিমিনোলজি এন্ড ক্রিমিনাল জাস্টিসে স্কলারশিপ পেয়েছেন।
উচ্চশিক্ষায় বিদেশে যেতে চাওয়া শিক্ষার্থীদের পরামর্শ দিয়ে পাভেল আহমেদ বলেন, আমার ডিপার্টমেন্টের শিক্ষার্থীদের উচিত স্কলারশিপ নিয়ে বিদেশে উচ্চশিক্ষা এবং এই কেন্দ্রিক ক্যারিয়ারের প্রতি আরও বেশি ফোকাস করা। সেই সঙ্গে যেসব অ্যাপ্লিকেশন ম্যাটেরিয়ালের ওপর ভিত্তি করে স্কলারশিপ দেওয়া হয়, সেসব বিষয় সম্পর্কে ইউনিভার্সিটিতে থাকতেই নিজে নিজে জেনে নেওয়া। আর এ জন্য রিসার্চ এবং পাবলিকেশনের প্রতি তাদের মনোযোগ দেওয়া উচিত।
এ ক্ষেত্রে শিক্ষকদের ভূমিকা সম্পর্কে তিনি বলেন, পাবলিকেশনের জন্য প্রধান ভূমিকা পালন করতে হবে ডিপার্টমেন্টের শিক্ষকদের। শিক্ষকদের উচিত একেকটা অ্যাসাইনমেন্টকে একেকটা জার্নাল, আর্টিকেলে রূপ দেওয়া এবং প্রত্যেক সেমিস্টারে একজন স্টুডেন্টকে দিয়ে কমপক্ষে একটি আর্টিকেল পাবলিকেশনের জন্য সাবমিট করা।