কোরবানির ইতিহাস ও তাৎপর্য
কোরবানির ইতিহাস ও তাৎপর্য
আসসালামু আলাইকুম সম্মানিত পাঠকবৃন্দ সবাইকে আমাদের ওয়েবসাইটে স্বাগতম। প্রিয় পাঠক আসা করি সবাই আল্লাহর রহমতে ভালো আছেন। বন্ধুরা বর্তমান সময়ে আমরা যে কোন তথ্যের জন্য গুগলে সার্চ করে থাকি। তাই ভিবিন্ন ধরনের পিক ডাউনলোড করতে আমাদের গুগলের সাহায্য নিতে হয়।
প্রিয় পাঠক আজকে আমরা আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি কোরবানির ইতিহাস ও তাৎপর্য সম্পর্কে। আপনি এই সমস্ত ছবি হোয়াটসঅ্যাপ, ইনস্টাগ্রাম বা অন্য কোন সোশ্যাল মিডিয়াতে ব্যবহার করতে পারেন। আমাদের সংগ্রহে আছে কোরবানি সম্পর্কে কিছু বানী। আমি আশা করি এই ছবিগুলো আপনার প্রোফাইল পিকচার হিসেবে ব্যবহার করতে কাজে লাগবে। তাই দেরি না করে ডাউনলোড করুন আপনার পছন্দের ছবি।
কোরবানির ইতিহাস ও তাৎপর্য
কোরবানি শব্দের অর্থ, ত্যাগ, উৎসর্গ, বিসর্জন। কোরবানি মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশ্ব মুসলিমদের জন্য একটি মহৎ ইবাদত। আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের উদ্দেশ্য আত্মোৎসর্গ করাই কোরবানি। শরিয়তের পরিভাষায় মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্য, নির্দিষ্ট দিনে, নির্দিষ্ট সময়ে, নির্দিষ্ট ব্যক্তির পক্ষ থেকে নির্দিষ্ট পশু জবেহ করাকে কোরবানি বলা হয়।
কোরবানি সম্পর্কে বানী: পবিত্র কালামে হাকিমে ঘোষিত হয়েছে, প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্য কোরবানির নিয়ম করে দিয়েছি, যাতে আমি তাদের জীবনোপকরণস্বরূপ, যেসব চতুষ্পদ জন্তু দিয়েছি সেগুলোর ওপর তারা আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে। (সুরা : আল হজ, আয়াত : ৩৪)। আদম (আ.) থেকে শুরু করে মুহাম্মদ (সা.) পর্যন্ত, সব নবী-রাসুল ও তাদের অনুসারীরা কোরবানি করেছেন। কোরআনুল কারিম থেকে আমরা জানতে পারি আদম (আ.)-এর দুই পুত্র হাবিল ও কাবিলের মাধ্যমে কোরবানির সূত্রপাত হয়। সে ইতিহাস আমরা কোরআন থেকে জানার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ। আল্লাহতায়ালা বলেন, হে রাসুল আপনি তাদের কাছে আদমের দুপুত্রের সংবাদ পাঠ করে, সত্যতার সঙ্গে শুনিয়ে দিন, যখন তারা উভয়ে কোরবানি করল একজনের কোরবানি কবুল করা হয়েছিল, কিন্তু অন্যজনের হয়নি। এক ভাই বলল, আমি অবশ্যই তোমাকে হত্যা করব, অন্য ভাই বলল, আল্লাহতায়ালা মুত্তাকিদের পক্ষ থেকে কোরবানি কবুল করেন। (সুরা আল মায়িদা, আয়াত : ২৭)
আমরা সুরা মায়েদার ২৭ নম্বর আয়াতের তাফসির ও সংশ্লিষ্ট ঘটনা পড়লে বুঝতে পারব, ইতিহাসের প্রথম কোরবানির সঠিক ও বিস্তারিত বিষয় : আদম (আ.)-এর দুপুত্র হাবিল ও কাবিলের ঘটনাটি বিশুদ্ধ ও শক্তিশালী সনদসহ বর্ণিত হয়েছে, ঘটনার বিবরণ হলো যখন হজরত আদম (আ.) পৃথিবীতে আগমন করেন এবং প্রজনন ও বংশবিস্তার আরম্ভ হয় তখন প্রতি গর্ভ থেকে একটি পুত্র ও একটি কন্যা এরূপ যমজ সন্তান জন্মগ্রহণ করত। তখন ভ্রাতা ও ভগিনী ছাড়া আদমের আর কোনো সন্তান ছিল না। অথচ ভ্রাতা ও ভগিনী পরস্পর বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হতে পারে না। তাই আল্লাহতায়ালা বাস্তব প্রয়োজনের খাতিরে আদম (আ.)-এর শরিয়তে এ নির্দেশ জারি করেন যে, একই গর্ভ থেকে যে যমজ পুত্র ও কন্যা জন্মগ্রহণ করবে তারা পরস্পর সহোদর ভ্রাতাণ্ডভগিনী গণ্য হবে। তাদের মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্ক হারাম হবে। কিন্তু পরবর্তী গর্ভ থেকে জন্মগ্রহণকারী পুত্রের জন্য প্রথম গর্ব থেকে জন্মগ্রহণকারিনী কন্যা সহোদর ভ্রাতা ভগিনী হিসেবে গণ্য হবে না। তাদের পরস্পর বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়া বৈধ হবে।
ঘটনাক্রমে কাবিলের সহজাত সহোদরা বোন ছিল সুন্দরী, আর হাবিলের সহজাত সহোদরা বোন ছিল কুশ্রী, যা কাবিলের ভাগ্যে পড়ল। এতে কাবিল অসন্তুষ্ট হয়ে হাবিলের শত্রুতে পরিণত হলো। সে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করল যে, আমার সহজাত বোনকেই আমার সঙ্গে বিবাহ দিতে হবে, হজরত আদম (আ.) তার শরিয়তের বিধান ঠিক রাখার জন্য প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলেন। অতঃপর তিনি কাবিল-হাবিলের মধ্যে বিরাজমান বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য বললেন তোমরা উভয়ই আল্লাহর সন্তুষ্টির নিমিত্তে কোরবানি পেশ করো। যার কোরবানি কবুল হবে সে সুন্দরী মেয়ের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হবে। আদম (আ.) নিশ্চিত বিশ্বাস ছিল যে, সত্যপন্থির কোরবানিই গ্রহণযোগ্য হবে। শুধু আদম (আ.) নয়, আল্লাহর নবী হজরত নূহ (আ.), হজরত ইয়াকুব (আ.), হজরত মুসা (আ.) সব নবীর উম্মতের ওপর কোরবানি ছিল। মুসলিম জাতির পিতা ইব্রাহিম আলাইহিস সাল্লাম, আল্লাহর প্রেমে, স্বীয় পুত্রকে কোরবানি করার মহাপরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে এক অবিস্মরণীয় ইতিহাস সৃষ্টি করেন। সাড়ে ৫ হাজার বছর আগে সবচেয়ে প্রিয় বস্তু ত্যাগের জন্য আদিষ্ট হন ইবরাহিম (আ.) আল্লাহতায়ালা বলেন, অতঃপর ইসমাইল (আ.) যখন তার পিতার সঙ্গে কাজ করার মতো বয়স উপনীত হলো তখন ইবরাহিম (আ.) বলল, হে বৎস আমি স্বপ্নে দেখি যে, তোমাকে আমি জবেহ করছি, এখন তোমার অভিমত কী? সে বলল, হে আমার আব্বাজান আপনি যা আদিষ্ট হয়েছেন তাই করুন, আল্লাহ চাইলে আপনি আমাকে ধৈর্যশীল সন্তান হিসেবে দেখতে পাবেন। (সুরা সফফাত আয়াত : ১০৩)
হজরত ইসমাইল আলাইহিস সালাম নিজের জানকে আল্লাহর রাহে উৎসর্গ করতে নির্দ্বিধায় সম্মত হয়ে আত্মত্যাগের বিস্ময়কর দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। ইবরাহিম আলাইহিস সালামের প্রতি এটা ছিল আল্লাহর পরীক্ষা, তাই পিতার ধারালো অস্ত্র দিয়ে সন্তান ইসমাইল (আ.)-এর একটি পশমও কাটতে পারেনি, পরে আল্লাহর হুকুমে জান্নাতের একটি দুম্বা জবাই হয়। পৃথিবীর বুকে এটাই ছিল স্রষ্টার প্রেমে সর্বশ্রেষ্ঠ আত্মত্যাগের উদাহরণ। অনুপম দৃষ্টান্তকে চিরস্মরণীয় করে রাখার জন্য উম্মতি মুহাম্মাদির জন্য কোরবানি করাকে ওয়াজিব করেছেন। পবিত্র কোরআনে হাকিমের রাব্বুল আলামিন বলেন, আল্লাহর কাছে পৌঁছায় না তোমাদের কোরবানির গোশত এবং রক্ত বরং পৌঁছাই তোমাদের তাকওয়া। (আয়াত নম্বর : ৩৭)
কোরবানির তাৎপর্য ও গুরুত্ব : রাসুল (সা.) বলেন, কোরবানির দিন রক্ত প্রবাহিত করার চেয়ে প্রিয় কোনো আমল আল্লাহর কাছে নেই, কিয়ামতের দিন কোরবানির পশু প্রত্যেকটি লোম, ক্ষুর, পশম ইত্যাদি নিয়ে আল্লাহর কাছে উপস্থিত। রক্ত জমিনে পতিত হওয়ার আগেই তা আল্লাহর কাছে বিশেষ মর্যাদায় পৌঁছে যায়। (তিরমিজি) কোরবানির পরিত্যাগকারীর ওপর বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু ওয়াসাল্লাম কঠোর সতর্কবার্তা পেশ করেছেন, বলেন সামর্থ্য আছে তার পরও কোরবানি করল না, সে যেন আমাদের ঈদগাহের ধারেকাছেও না আসে। (মিশকাত)
মুসলমানদের শুধু কোরবানির প্রতীক হিসেবে পশু জবাইয়ের মাধ্যমে সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না, বিশ্ব মানবতার মুক্তি ও বিশ্ব মুসলমানদের কল্যাণের জন্য সবাইকে নিবেদিতপ্রাণ হতে হবে। মানুষের অন্তর থেকে পাশবিক চিন্তা-চেতনাকে কোরবানি বিসর্জন দিতে হবে।
প্রতি বছর কোরবানি পশু হনন করতে আমাদের মধ্যে আসে না, বরং কোরবানির মাধ্যমে পশু প্রবৃত্তিকে বিসর্জন দিয়ে, আল্লাহকে সন্তুষ্টি করার এটি যে একটি উত্তম মাধ্যম তা পুরো মুসলিম মিল্লাতকে স্মরণ করিয়ে দিতে ঈদুল আজহা প্রতি বছর ফিরে আসে। ঈদুল আজহা আমাদের শেখায়, মালিকের কাছে নিজেকে বিলিয়ে দাও! মাথা নত করে দাও! কোরবান করে দাও সব সাধ-আহ্লাদ! নিজের সুখগুলো ভাগ করে দাও গরিব-অসহায় সব মানুষের হাতে।
Tag:-কোরবানির ইতিহাস ও তাৎপর্য