রমজান মাসের কিছু গুরুত্বপূর্ণ আমল
রমজান মাসের কিছু গুরুত্বপূর্ণ আমল
রমজানের দিনের বেলার বিশেষ ফরজ আমল হল সওম বা রােজা । রােজা জীবনের সকল গুনাহ মুছে দেয় । রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন , “ যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় রমজানের রােজা ও তারাবিহ আদায় করবে , সে ওই দিনের মতাে নিস্পাপ হয়ে যাবে যেদিন তার মা তাকে জন্ম দিয়েছিল । ( সহিহ ইবনে খুযাইমা , হাদিস : ২২০১ )
২ . বিশ রাকাত তারাবিহ পড়া
রমজানের রাতের বিশেষ আমল হল কিয়ামে রমজান তথা তারাবিহের নামাজ । এটি আল্লাহ । তা ‘ আলার অফুরন্ত রহমত ও মাগফিরাত লাভের অন্যতম উপায় । নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন , “ যে ব্যক্তি বিশ্বাসের সাথে সওয়াবের আশায় রমজানের রাতে তারাবিহ আদায় করে তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেয়া হয় । ( সহিহ বুখারি , হাদিস : ৩৭ )
আরো পড়ুন রোজা রাখার ইতিহাস
৩ . কুরআন মাজিদ তেলাওয়াত করা
এ মাসে অধিক পরিমাণে তেলাওয়াত করা উচিত।কারণ এ মাসের সঙ্গে কুরআনের সম্পর্ক অনেক গভীর। এ মাসেই কুরআন নাজিল হয়েছে ।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ মাসে অনেক বেশি তেলাওয়াত করতেন । হাদিস শরিফে এসেছে , হযরত জিবরাঈল ( আ . ) রমজানের প্রতি রাতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আসতেন এবং তারা একে অপরকে কুরআন তেলাওয়াত করে শােনাতেন । ( সহিহ বুখারি হাদিস :৬)
সুতরাং প্রত্যেকের উচিত , রমজান মাসে একবার হলেও কুরআন মাজিদ খতম করা । সালাফে । সালেহিনের জীবনীতে দেখা যায় , তাঁরা ও তাঁদের পরিবারের সদস্যরা প্রত্যেকেই রমজানে বহুবার । কুরআন মাজিদ খতম করতেন ।
৪ . বেশি বেশি জিকির করা
রমজানে অধিক পরিমাণে আল্লাহর জিকির করা উচিত।চলতে – ফিরতে , উঠতে – বসতে সর্বদা কালিমা তাইয়্যেবা , সুবহানআল্লাহ , আলহামদুলিল্লাহ ও আল্লাহু আকবার পড়তে থাকা যায় । সকাল – সন্ধ্যা ও বিভিন্ন সময়ের মাসনুন জিকির ও দু ‘ আসমূহ পড়া যায় । দরুদ শরিফও বেশি বেশি পড়া যায় ।
আরো পড়ুনঃ রোজা ভঙ্গের কারন কি কি | রোজা মাকরূহ হওয়ার কারন কি কি
৫ . নফল নামাজ পড়া
অন্যান্য সময়ের তুলনায় এ মাসে বেশি বেশি । নফল নামাজ পড়া দরকার । কমপক্ষে বিভিন্ন সময়ের সাথে সম্পর্কিত নফল নামাজগুলাে আদায় করা । যেমন – ইশরাক , চাশত , আওয়াবিন ও: তাহাজ্জুদ । আসর ও ঈশার পূর্বে চার রাকাত সুন্নত । এবং জোহর ও ঈশার পরের সুন্নত শেষে দুই রাকাত নফল পড়া । প্রতিদিন অন্তত একবার তাহিয়্যাতুল অযু ও দুখলুল মসজিদ পড়া । সাহরির জন্য উঠে দু ‘ চার রাকাত তাহাজ্জুদ নামাজ অনায়াসে পড়া যায় ।
৬ . অধিক পরিমাণে দু’আ করা
রমজান দু’আ কবুলের মাস । নবী করিম । সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন , রােজাদারের দু’আ ফিরিয়ে দেয়া হয় না । মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা , হাদিস : ৮৯৯৫ ।
সুতরাং এ মাসের রহমত , বরকত , মাগফিরাত , জাহান্নাম থেকে মুক্তি ও জান্নাত লাভের জন্য । এবং পার্থিব বৈধ প্রয়ােজনাদির জন্যও আল্লাহ তা ‘ আলার কাছে বেশি বেশি দু ‘ আ করা একান্ত কাম্য ।
৭ . তাওবা ও ইস্তেগফার করা
রমজান মুমিনের জন্য ক্ষমার সুসংবাদ নিয়ে আসে । যে ব্যক্তি রমজান পেয়েও নিজের গুনাহসমূহ মাফ করাতে পারল না তার ওপর জিবরাঈল আ . ও দয়ার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অভিশাপ করেছেন । তাই জীবনের কৃত গুনাহের কথা স্মরণ করে বেশি বেশি তাওবা ইস্তগফার করা এবং আল্লাহ তা ‘ আলার দরবারে ক্ষমা মঞ্জুর করিয়ে নেয়ার এটিই উত্তম সময় । বিশেষ করে ইফতার ও তাহাজ্জুদের সময় আল্লাহ তা ‘ আলার দরবারে অধিক হারে ক্ষমা চাওয়া ও তাওবা করা উচিত ।
৮ . দান – সদকা করা
দান – সদকা সর্বাবস্থায় উৎকৃষ্ট আমল । তবে রমজানে তার গুরুত্ব ও ফজিলত আরাে বেড়ে যায় । হাদিস শরিফে আছে , রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সকল মানুষের চেয়ে অধিক দানশীল ছিলেন । রমজান মাসে তাঁর দানের হস্ত আরাে বেশি প্রসারিত হতাে । ( সহিহ বুখারি , হাদিস : ১৯০২ ) ]
তাই এ মাসে বেশি বেশি দান করা , নফল সদকা যথাসাধ্য বাড়িয়ে দেয়া , অনাদায়ী যাকাত আদায় করা , গরিবদের সহায়তা করা এবং দ্বীনের প্রচার প্রসারে অংশগ্রহণ করা গুরুত্বপূর্ণ আমল ।
আরো পড়ুনঃ রমজান মাসের গুরুত্ব ও ফজিলত এবং সেহরি ও ইফতারের দোয়া
৯. রােজাদারকে ইফতার করানাে
রােজাদারকে ইফতার করানােও অনেক বড় ফিজিলতপূর্ণ আমল । রাসুলুল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন , যে ব্যক্তি কোনাে রােজাদারকে ইফতার করাবে সে ওই রােজাদারের অনুরূপ সওয়াব লাভ করবে । তবে রােজাদারের । সওয়াব সামান্য পরিমাণও হ্রাস করা হবে না । ( জামে তিরমিজি , হাদিস : ৮০৭ )
১০ . ইতিকাফ করা
রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করা সুন্নত । এটি রমজানের যাবতীয় ফায়দা – ফজিলত , রহমত , বরকত ও মাগফিরাত লাভ করা এবং শবে কদর পাওয়ার সহজ উপায় । নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর মাদানি জীবনে প্রতি বছর ইতিকাফ করেছেন । সাহাবিরা তাঁর সাথে ইতিকাফে শরিক হয়েছেন ।
১১ . শবে ক্বদর অন্বেষণ করা
হাজার রজনী অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ রাত হল শবে ক্বদর । রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজানের শেষ দশকে বিশেষত শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলােতে শবে ক্বদর অন্বেষণ করার জন্য উদ্বুদ্ধ করেছেন । সুতরাং ইবাদত – বন্দেগীর সাথে এ রাত্রী জাগরণ করা উচিত । সব ধরনের গুনাহ , বিদআত ও ভুল আমল থেকে বিরত থাকা চাই । আল্লাহ তাআলা সবাইকে উপরােক্ত আমলগুলাের মাধ্যমে রমজানকে জীবন্ত ও প্রাণবন্ত করে তােলার তাওফিক দান করুন আমিন ।