Islamer Bani

রোজার কিছু হাদিস | রমজান মাসের হাদিস

রোজার কিছু হাদিস | রমজান মাসের হাদিস


১। সালমান ফারেসীর লম্বা হাদীস। যাতে আছে; ‘‘যে ব্যক্তি তাতে কেউ একটি নফল ইবাদত করবে, সে ব্যক্তি অন্য মাসে একটি ফরয আদায়ের সমান সওয়াব লাভ করবে এবং যে কেউ তাতে একটি ফরয আদায় করবে, তার অন্য মাসে সত্তরটি ফরয আদায় করার সমান লাভ করবে। (এ মাসের ১টি নফল ১টি ফরয এবং ১টি ফরয ৭০টি ফরযের সমতুল্য) —এ মাসে মুমিনের রুযী বৃদ্ধি করা হয়। — এ মাসের প্রথম ভাগ রহমত, মধ্য ভাগ মাগফিরাত এবং শেষ ভাগ জাহান্নাম থেকে মুক্তি।—’’

২। ‘‘রমাযানের প্রত্যেক রাত্রে মহান আল্লাহ ১০লক্ষ ৬ লক্ষ মানুষকে জাহান্নাম থেকে মুক্ত করেন। এর শেষ রাতে মুক্ত করেন পূর্বে বিগত সকল সংখ্যা পরিমাণ।’’ অন্য এক বর্ণনায় বলা হয়েছে, ‘‘প্রত্যহ ৬০ হাজার মানুষকে মুক্ত করা হয়।’’
৩। ‘‘রমাযান মাসের জন্য বেহেশ্ত্কে সুসজ্জিত করা হয়। প্রথম রাত্রে আরশের নিচে এক প্রকার হাওয়া চলে। — হুরীগণ বেহেশ্তের উঁচু জায়গায় দাঁড়িয়ে বলতে থাকে, ‘আল্লাহর কাছে আমাদের কোন পয়গামদাতা আছে কি? যার সাথে তিনি আমাদের বিবাহ দেবেন—।’ প্রত্যহ ইফতারের সময় আল্লাহ দশ লাখ জাহান্নামীকে মুক্ত করেন। মাসের শেষ দিনে বিগত সকল সংখ্যক মানুষ মুক্ত করেন। শবেকদরের রাতে কাবার পিঠে সবুজ পতাকা গাড়া হয়।— ফিরিশ্তাগণ ইবাদতকারীদের সাথে মুসাফাহা করেন—।’’
৪। ‘‘রমাযান মাসের জন্য বেহেশ্ত্কে সুসজ্জিত করা হয়। প্রথম রাত্রে আরশের নিচে বেহেশ্তের গাছ-পাতা থেকে হুরীদের উপর এক প্রকার হাওয়া চলে। তখন হুরীগণ বলে, ‘হে রবব! তোমার বান্দাগণের মধ্য হতে আমাদের স্বামী নির্বাচন কর; যাদেরকে দেখে আমাদের এবং আমাদেরকে দেখে তাদের চক্ষু শীতল হয়।’’
৫। ‘‘আল্লাহ রমাযান মাসের প্রথম সকালে কোন মুসলমানকে মাফ না করে ছাড়েন না।’’
৬। রমাযানের পর শ্রেষ্ঠ রোযা, রমাযানের তা’যীমে শা’বানের রোযা এবং সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ সদকা হল রমাযানের সদকা।’’
৭। ‘‘শ্রেষ্ঠ দান হল, রমাযান মাসে দান।’’
৮। ‘‘আমার উম্মতকে রমাযানে পাঁচটি জিনিস দান করা হয়েছে; যা ইতিপূর্বে কোন উম্মতকে দান করা হয় নি। ইফতার করা পর্যন্ত পানির মাছ অথবা ফিরিশ্তারা তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। আল্লাহ প্রত্যেক দিন বেহেশ্ত্কে সুসজ্জিত করে থাকেন।–’’
৯। ‘‘রজব মাস আগত হলে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) দুআ করতেন, ‘হে আল্লাহ আমাদের রজব ও শা’বানে বর্কত দাও এবং রমাযান পৌঁছাও।’

রোজার কিছু হাদিস | রমজান মাসের হাদিস

১০। ‘‘রমাযান প্রবেশ করলে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) প্রত্যেক বন্দীকে মুক্তি দিতেন এবং প্রত্যেক যাচ্ঞাকারীকে দান করতেন।’’
১১। ‘‘রমাযান প্রবেশ করলে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম)-এর রঙ বদলে যেত, তাঁর নামায বেড়ে যেত, দুআয় আকুল হতেন—’’
১২। ‘‘তোমাদের কাছে বর্কতের মাস রমাযান এসে উপস্থিত হয়েছে। — আল্লাহ এ মাসে তোমাদের আপোসে প্রতিযোগিতা দেখবেন এবং তোমাদেরকে নিয়ে ফিরিশ্তাদের কাছে গর্ব করবেন।—’’
১৩। ‘‘রমাযান মাসের একটি তসবীহ অন্য মাসের হাজার তসবীহ অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ।’’
১৪। ‘‘রমাযান কি জিনিস তা যদি আমার উম্মত জানত, তাহলে আশা করত যে, সারা বছরটাই যেন রমাযান হোক। যে কেউ রমাযানের একটি রোযা রাখবে, তার সঙ্গে মুক্তার তাঁবুতে আয়তলোচনা একটি হুরীর সাথে বিবাহ দেওয়া হবে। —প্রত্যেক স্ত্রীর হবে ৭০টি করে ভিন্ন ভিন্ন পরিচ্ছদ। তাকে ৭০ রঙের খোশবু দান করা হবে। –’’
১৫। ‘‘রমাযানের প্রথম রাত্রি এলে আল্লাহ রোযাদার সৃষ্টির প্রতি দৃষ্টিপাত করেন। আর যে বান্দার প্রতি আল্লাহ দৃষ্টিপাত করেন, তিনি তাকে আযাব দেন না। রমাযানের প্রত্যেক রাত্রে তিনি ১০ লাখ জাহান্নামীকে মুক্তি দেন।—’’
১৬। ‘‘যে ব্যক্তি মক্কায় রমাযান পেয়ে সেখানে রোযা রাখে এবং যথাসাধ্য রাতের নামায পড়ে, আল্লাহ তার জন্য অন্য জায়গার ১ লাখ মাস রমাযানের সওয়াব লিখে দেন—।’’
১৭। ‘‘মক্কার একটি রমাযান অন্য জায়গার হাজার রমাযান অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ।’’
১৮। ‘‘মদ্বীনার একটি রমাযান অন্য জায়গার হাজার রমাযান অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ।’’
১৯। ‘‘তিন ব্যক্তিকে পানাহারের নিয়ামত সম্পর্কে প্রশ্ন করা হবে না; ইফতারকারী, সেহরী খানে-ওয়ালা—-।’

’রোজার কিছু হাদিস | রমজান মাসের হাদিস

২০। ‘‘আল্লাহ কিরামান কাতেবীনকে অহী করেছেন যে, আমার রোযাদার বান্দাদের আসরের পর কৃত কোন পাপ লিপিবদ্ধ করো না।’’
২১। ‘‘—আল্লাহর একটি খাদ্য পরিপূর্ণ সুসজ্জিত খাঞ্চা আছে, যাতে এমন সব খাদ্য আছে যা কোন চক্ষু দর্শন করে নি, কোন কর্ণ শ্রবণ করে নি এবং কারো মানুষের মনেও তা কল্পিত হয় নি। যে খাঞ্চাতে রোযাদাররা ছাড়া অন্য কেউ বসবে না।’’
২২। ‘‘যে বান্দা আমার সন্তুষ্টি লাভের জন্য রোযা রাখবে, আমি তার দেহকে সুস্থ রাখব এবং তাকে বৃহৎ সওয়াব দান করব।’’
২৩। ‘‘রোযা রাখ সুস্থ থাকবে।’’
২৪। ‘‘রোযা হল অর্ধেক ধৈর্য।’’
২৫। ‘‘প্রত্যেক জিনিসের যাকাত আছে, আর দেহের যাকাত হল রোযা।’’
২৬। ‘‘রোযাদারের নিকট কেউ খাবার খেলে, খাবার শেষ না হওয়া পর্যন্ত তার জন্য ফিরিশ্তাবর্গ দুআ করতে থাকেন।’’[29]
২৭। ‘‘রোযাদারের অস্থিসমূহ তসবীহ পাঠ করে, এবং যতক্ষণ তার সামনে খাওয়া হয়, ততক্ষণ ফিরিশ্তাগণ তার জন্য দুআ করতে থাকেন।’’
২৮। ‘‘রোযাদারের ঘুম ইবাদত, তার নীরবতা তসবীহ এবং আমলের সওয়াব বহুগুণ।’’
২৯। ‘‘রোযাদার ইবাদতে থাকে; যদিও সে বিছানায় শুয়ে থাকে।’’
৩০। ‘‘রোযা রাখলে সকালে দাঁতন করো এবং বিকালে করো না। কারণ, যে রোযাদারের ঠোঁট দুটি বিকালে শুকিয়ে যায়, কিয়ামতে সেই রোযাদারের চোখের সামনে জ্যোতি হবে।’’

রোজার কিছু হাদিস | রমজান মাসের হাদিস

৩১। ‘‘যে কেউ রোযা নষ্ট করবে, সে যেন একটি উঁটনী কুরবানী করে। তা করতে না পারলে সে যেন মিসকীনদেরকে ৭৫ কেজি খেজুর দান করে।’’
৩২। ‘‘যে ব্যক্তি রমাযানের একটি মাত্র রোযা কোন ওযর ও রোগ বিনা নষ্ট করে দেয় সে ব্যক্তি সারা জীবন রোযা রাখলেও তা পূরণ করতে পারবে না।
৩৩। ‘‘পাঁচটি কাজে রোযা ও ওযূ নষ্ট হয়; মিথ্যা বলা, গীবত করা, চুগলী করা, (মহিলার প্রতি) কামদৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখা এবং মিথ্যা কসম খাওয়া।’’
৩৪। ‘‘(যে দুজন মহিলা রক্ত অথবা গোশত ও পুঁজ বমি করেছিল) তারা হালাল জিনিস ব্যবহার না করে রোযা রেখেছিল, কিন্তু আল্লাহ কর্তৃক হারাম জিনিস দ্বারা ইফতার করেছিল। উভয়ে বসে (গীবত করার মাধ্যমে) লোকের গোশত খেয়েছিল।’’
৩৫। ‘‘সফরে রমাযানের রোযা রাখা, ঘরে থাকা অবস্থায় রোযা নষ্টকারীর মত।’’
৩৬। ‘‘যে ব্যক্তি হালাল খেজুর দ্বারা ইফতার করবে, তার নামাযকে ৪ শত গুণ বর্ধিত করা হবে।’’[39]
৩৭। ‘‘যে ব্যক্তি হালাল উপার্জন থেকে রমাযান মাসে একটি রোযাদারকে ইফতার করাবে, সে ব্যক্তির জন্য রমাযানের সমস্ত রাত্রে ফিরিশ্তাবর্গ দুআ করবেন এবং শবেকদরে জিবরাঈল তার সাথে মুসাফাহা করবেন—।’
৩৮। ‘‘ইফতারের সময় রোযাদারের দুআ রদ্দ্ করা হয় না।’’
৩৯। ‘‘প্রত্যেক রোযাদার বান্দার জন্য ইফতারের সময় কবুলযোগ্য দুআ রয়েছে। তা তাকে দুনিয়ায় দান করা হয় অথবা আখেরাতের জন্য জমা রাখা হয়।’’
৪০। ইফতারের সময় তিনি বলতেন, ‘‘আল্লাহুম্মা লাকা সুমতু অ আলা রিযক্বিকা আফত্বারতু।’’

রোজার কিছু হাদিস | রমজান মাসের হাদিস

৪১। ইফতারের সময় তিনি বলতেন, ‘‘আল্লাহুম্মা লাকা সুমতু অ আলা রিযক্বিকা আফত্বারতু। ফাতাক্বাববাল মিন্নী, ইন্নাকা আন্তাস সামীউল আলীম।’’
৪২। ইফতারের সময় তিনি বলতেন, ‘‘আলহামদু লিল্লাহিল্লাযী আআ’নানী ফাসুমতু অরাযাক্বানী ফাআফত্বারতু।’’
৪৩। ‘‘রমাযানের রাতে মুমিন নামায পড়লে আল্লাহ তার প্রত্যেক সিজদার বিনিময়ে ১৫০০ সওয়াব লিপিবদ্ধ করেন এবং বেহেশ্তে তার জন্য লাল রঙের প্রবালের একটি গৃহ নির্মাণ করা হয়; তার আছে ৬০০০০ দরজা, প্রত্যেক দরজায় আছে একটি করে সবর্ণের মহল—। রমাযানের প্রথম রোযা রাখলে পশ্চাতের সকল পাপ মাফ হয়ে যায়—। প্রত্যহ ফজরের নামাযের পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত ৭০০০০ ফিরিশ্তা তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে—। রমাযান মাসের দিনে অথবা রাতে প্রত্যেক সিজদার বিনিময়ে একটি করে (জান্নাতে) বৃক্ষ লাভ হবে; যার ছায়াতলে সওয়ারী ৫০০ বছরের পথ চলবে।’’
৪৪। ‘‘ঈদের দিন এসে উপস্থিত হলে ফিরিশ্তাবর্গ রাস্তার মোড়ে মোড়ে দাঁড়িয়ে আহবান করেন—। অতঃপর যখন নামায হয়ে যায় তখন আহবানকারী আহবান করে, শোন! তোমাদের প্রতিপালক তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছেন—।’ আর আসমানে এই দিনের নাম হল পুরস্কারের দিন।’’
৪৫। ‘‘রমাযানের রোযা আকাশ ও পৃথিবীর মাঝে লটকানো থাকে। ফিতরা দিলে তবেই তা উত্থিত করা হয়।’’
৪৬। ‘‘যে ব্যক্তি রোযার (শেষ) দশকে ই’তিকাফ করবে, তার দুটি হজ্জ ও দুটি উমরাহ করার সমান সওয়াব লাভ হবে।’’
৪৭। ‘‘রমাযান বলো না। কারণ, ‘রমাযান’ হল আল্লাহর অন্যতম নাম। বরং তোমরা রমাযান মাস বলো।’’
৪৮। ‘‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে একদিন রোযা রাখবে, তার কাছ থেকে জাহান্নামকে এত দূরের পথ করে দেবেন; যে পথ একটি কাক ছানা অবস্থা থেকে বুড়ো হয়ে মরা পর্যন্ত উড়ে অতিক্রম করতে পারে।
৪৯। ‘‘মুসলিম রোযা রাখলে —- পাপ থেকে সেই রকম বেরিয়ে আসে, যেমন সাপ বেরিয়ে আসে তার খোলস থেকে।’’
৫০। ‘‘মুসলিম রোযা রাখলে —- পাপ থেকে সেই রকম বেরিয়ে আসে, যেমন বেরিয়ে আসে মায়ের পেট থেকে নিষ্পাপ হয়ে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button