রাষ্ট্রদ্রোহিতার দায়ে রুশ বিজ্ঞানীর কারাদণ্ড (গুরুত্বপূর্ণ খবর)
রাষ্ট্রদ্রোহিতার দায়ে রুশ হাইপারসনিক বিজ্ঞানী আলেকজান্ডার শিপলিউককে ১৫ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে বলে রুশ রাষ্ট্রীয় মিডিয়া জানিয়েছে। ইপারসনিক প্রযুক্তিতে কাজ করা এই বিজ্ঞানী পরবর্তী প্রজন্মের ক্ষেপণাস্ত্রগুলোতে প্রয়োগ করা যেতে পারে এমন গবেষণার সাথে যুক্ত বিশেষজ্ঞদের মধ্যে সর্বশেষতম ব্যক্তি যাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।
রাশিয়ান বার্তাসংস্থা তাস জানিয়েছে, আলেকজান্ডার শিপলিউকের বিরুদ্ধে হাইপারসনিক প্রযুক্তি সম্পর্কিত রাষ্ট্রীয় গোপনীয় তথ্য বিদেশি শক্তির কাছে দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে। তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তিনি।
রুদ্ধদ্বার কক্ষে অনুষ্ঠিত বিচারের পরে শিপলিউককে একটি উচ্চ-নিরাপত্তা পেনাল কলোনীতে আটক করা হয়। ২০২২ সালের আগস্টে যখন তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, তখন তাস শিপলিউককে তার ক্ষেত্রের একজন নেতৃস্থানীয় বিশেষজ্ঞ এবং রাশিয়ান একাডেমি অব সায়েন্সেসের সদস্য হিসাবে বর্ণনা করেছিল।
অবশ্য শিপলিউকের গোপন বিচারের বিষয়ে খুব কম তথ্যই সামনে এসেছে। তবে বার্তাসংস্থা রয়টার্স গত বছর রিপোর্ট করেছিল, চীনের কাছে গোপনীয় তথ্য দেওয়ার দায়ে তাকে অভিযুক্ত করা হয়েছিল।
বিবিসি রাশিয়ান জানিয়েছে, তিনি দোষ স্বীকার করেননি। তার ছেলে মিখাইল শিপলিউক বিবিসিকে বলেছেন: তিনি এবং তার আইনজীবী শেষ পর্যন্ত লড়াই করেছেন। তিনি তার বাবাকে এমন একজন ব্যক্তি হিসেবে বর্ণনা করেছেন যিনি তার কাজকে ভালোবাসেন, সাধারণভাবে যিনি এটির জন্য তার জীবন দিয়ে দিয়েছেন।
আরও পড়ুন- খারকিভে রুশ হামলায় শিশুসহ নিহত ৭
তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে হাইপারসনিক প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করা একাধিক রাশিয়ান পদার্থবিজ্ঞানীকে দেশদ্রোহিতার অভিযোগে অভিযুক্ত এবং কারারুদ্ধ করা হয়েছে। মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
২০১৫ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১২ জন পদার্থবিজ্ঞানী গ্রেপ্তার হয়েছে যারা কোনও না কোনও ভাবে এই হাইপারসনিক প্রযুক্তি বা এটা নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত ছিলেন। তারা প্রত্যেকে ভয়ঙ্কর দেশদ্রোহীতার অভিযোগে অভিযুক্ত, যার মধ্যে আছে রাষ্ট্রীয় গোপন খবর বিদেশি রাষ্ট্রে পাচার করা।
যদিও তাদের সহকর্মী ও আইনজীবিরা বলছেন, এই বিজ্ঞানীরা অস্ত্র তৈরির সাথে যুক্ত ছিল না, কিছু মামলা দায়ের হয়েছে তারা যে খোলাখুলিভাবে অন্য দেশের গবেষকদের সাথে মিলে কোন কাজ করছিল সেটার জন্য। তবে সমালোচকরা মনে করেন, এফএসবি আসলে এরকম একটা ধারণা তৈরি করতে চায় যে বিদেশি স্পাইরা তাদের অস্ত্রের গোপন খবর জানার চেষ্টা করছে।
উল্লেখ্য, ৫৭ বছর বয়সী এই বিজ্ঞানী ইনস্টিটিউট অব থিওরিটিক্যাল অ্যান্ড অ্যাপ্ল্যাইড মেকানিক্স-এর সাইবেরিয়ান শাখার পরিচালক ছিলেন। তিনি হাইপারসনিক ফ্লাইটের বিষয়ে কাগজপত্রও প্রকাশ করেছেন।
আরও উল্লেখ্য, হাইপারসনিক বলতে এমন মিসাইল বোঝায় যা অত্যন্ত দ্রুত গতিতে চলতে পারে এবং লক্ষ্যবস্তুর দিকে যাওয়ার সময় আকাশ প্রতিরক্ষাকে এড়িয়ে এটি দিক পরিবর্তন করতেও সক্ষম। রাশিয়া বলছে, তারা ইউক্রেনের যুদ্ধে দুই ধরনের মিসাইল ব্যবহার করেছে – কিনঝাল, যা বিমান থেকে উৎক্ষেপণ করা হয়, এবং জিরকন ক্রুজ মিসাইল। হাইপারসনিক মিসাইলগুলো শব্দের গতির অন্তত পাঁচগুণ গতিতে ছুটতে পারে এবং উড্ডয়নের সময় দিক পরিবর্তনও করতে পারে। আর এই কারণে আকাশ প্রতিরক্ষার মাধ্যমে এই ধরনের মিসাইলগুলোকে থামানো বেশ কঠিন।